অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম
আপনি কি অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন না কিভাবে অনলাইনে মা ও শিশু সহায়তা কার্ড এর আবেদন করতে হয় মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা কি কি। গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে এ সকল বিষয়ে জানতে হলে এই পোষ্টটি বিস্তারিত মনযোগ সহকারে পড়ুন।
এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আরো জানতে পারবেন একজন গর্ভবতী মহিলা মাসে কত টাকা করে ভাতা পাবে, অনলাইনে আবেদন করো তারিখ থেকে কত তারিখের মধ্যে করতে হবে, কোথায় কিভাবে, কার কাছে এবং কার মাধ্যমে আবেদন করলে আপনি সহজেই গর্ভবতী ভাতা পাবেন ইত্যাদি বিষয়াবলি।
ভূমিকা
সরকার গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভবতী ভাতা দিয়ে থাকে। যাকে বলা হয় গর্ভবতী কার্ড। কিন্তু ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে এই কর্মসূচির নতুন নামকরণ করা হয়েছে যার নাম হচ্ছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। একজন গরীব অসহায় দুষ্ট মহিলার শিশু যাতে অপুষ্টিহীনতায় না ভোগে সে বিষয়টা মাথায় রেখে সরকার এই ভাতা প্রদান করে থাকে। কিভাবে এ ভাতা পাবেন সে সস্পর্কে আলোচনা করা হল।
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা
গরিব অসহায় মহিলাদের গর্ভবতী ভাতার অনলাইনে আবেদন করার কথা বলা হলেও সবাই এই ভাতার আওতাভুক্ত হতে পারবেনা। এই ভাতার আহতাভুক্ত হতে হলে গর্ভবতী মহিলাদের বিশেষ কিছু যোগ্যতা থাকা আবশ্যক যথা:
- বয়স: একজন গর্ভবতী মহিলার সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। বয়সের কম বা বেশি কোন মহিলা মাতৃত্বকালীন বা তার আওতাভুক্ত হতে পারবেন না।
- ভোটার আইডি কার্ড: গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড ধারী হতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড না থাকলে ওই গর্ভবতী মহিলা মাতৃত্বকালীন মাতার আবেদন করতে পারবেন না। অনেকে মনে করেন ভোটার আইডি না থাকলে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে গর্ভবতী মহিলার মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে পারবেন। এ ধারণাটা ভুল।
- গর্ভধারণ কাল: কোন মহিলা তার প্রথম সন্তান এবং দ্বিতীয় সন্তানের জন্য গর্ভবতী ভাতা পাবেন। কিন্তু তৃতীয় সন্তানের জন্য তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে পারবেন না।
- গর্ভের সময়কাল: আবেদন করার সময় গর্ভবতী মহিলা অবশ্যই ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের গর্ভবতী হতে হবে।
- মাসিক আয়: গর্ভবতী মহিলার পরিবার প্রধানের মাসিক আয় পনেরশো টাকার কম হতে হবে।
এছাড়াও আরো কিছু ক্যাটাগরি রয়েছে যা থাকলে একজন গর্ভবতী মহিলা ভাতা পাওয়ার অধিকার পাবেন। যেমন:
- মহিলা যদি প্রতিবন্ধী হয় অথবা পরিবারের যদি কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থেকে থাকে।
- নিজস্ব বসতবাড়ি না থাকলে অর্থাৎ অন্যের জমিতে বসতবাড়ি করে বসবাস করলে।
- চাষ করার জন্য নিজের কোন জমি জমা না থাকলে।
- বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলে।
- বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল না থাকলে।
- পরিবার প্রধান মহিলা হলে অর্থাৎ পরিবারের উপার্জন কম পুরুষ ব্যক্তি না থাকলে।
অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম
পূর্বে গর্ভবতী ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদনের সিস্টেম ছিল না। তাই অনেকে বুঝতেই পারত না কখন কিভাবে ভাতা হয়। সেজন্য অনেক মহিলা ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্বেও এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়। আর সেই কারণেই গর্ভবতী মহিলাদের অনলাইনে ভাতা আবেদন করার নিয়মটি চালু করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক উপায়ে নতুন চুল গজানোর উপায়
কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করার ফলে আপনি সঠিকভাবে অনলাইনে গর্ভবতী পাতার আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার জন্য ওয়েবসাইটের লিংক হচ্ছে: http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration
ব্যক্তিগত তথ্য
প্রথম ধাপ: উক্ত লিংকে প্রবেশ করার পর আপনার সামনে একটি ভাতার আবেদন ফরম ওপেন হবে। প্রথমে আপনাকে অর্থ বছর সিলেট করতে হবে। এরপর গর্ভবতী মহিলার ভোটার আইডি নাম্বার এবং একটু নিচে জন্ম তারিখ সঠিকভাবে প্রদান করলে নির্বাচন কমিশন থেকে অটোমেটিক ভাবেই ভোটার আইডির যাবতীয় তথ্য প্রদর্শিত হবে।
আরো পড়ুন: হাটুর ব্যাথা সারানোর ঘরোয়া উপায়
এরপর যদি মহিলা যদি কোন ডাকনাম থেকে থাকে সে নামটি দিতে হবে, জন্মস্থান কোথায় সেটা সিলেক্ট করতে হবে, তিনি কোন ধর্মের সেটা সিলেট করতে হবে, একটা সঠিক মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে, তার শিক্ষকতা যোগ্যতা হবে, রক্তের গ্রুপ কি সেটা দিতে হবে, বিবাহিত নাকি বিধবা সেটা উল্লেখ করতে হবে, অন্যান্য কোন সুবিধাভোগী কিনা সেটাও উল্লেখ করা আবশ্যক।
ব্যক্তিগত তথ্য
স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
দ্বিতীয় ধাপ: দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে অবশ্যই মহিলার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ভরাট করতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান অস্থায়ী ঠিকানা যদি একই হয় তাহলে একই ঘরে টিক চিহ্ন দিতে হবে।
গর্ভবতী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
আর্থ-সামাজিক তথ্য
তৃতীয় ধাপ: তৃতীয় ধাপে গর্ভবতী মহিলার আর্থ-সামাজিক তথ্য প্রদান করতে হবে। তথ্যগুলো হল:
গর্ভবতী মহিলার গৃহস্থলীর মালিকানাধীন ব্যবহৃত জমির পরিমাণ কতটুকু।
- খানা প্রধানের পেশা কি?
- খানা প্রধানের মাসিক আয় কত?
- তার বাড়িতে নিজস্ব পায়খানা আছে কিনা?
- বাড়িতে বিদ্যুতের সুবিধা আছে কিনা?
- বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থা আছে কিনা?
- ঘুমানোর ঘরে দেওয়াল কিসের তৈরি?
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে কিনা?
স্বাস্থ্যগত তথ্য
চতুর্থ ধাপ: এ ধাপে গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যগত তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন:
গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থগত তথ্য
পেমেন্টের তথ্য
পঞ্চম ধাপ: পঞ্চম ধাপ টাকা পাওয়ার জন্য পরবর্তী মহিলা কি ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করবেন সে বিষয়ে তথ্য দিতে হবে। পেমেন্টের ধরন মোবাইল ব্যাংকিং হবে না ব্যাংকিং এ মাধ্যমে টাকা নিবেন। যদি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা নিতে আগ্রহী হোন তাহলে কোন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা নিতে আগ্রহে সেটা সিলেক্ট করতে হবে।
যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট, ইত্যাদি এবং একাউন্ট নম্বর প্রদানের জায়গায় সঠিক মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে এবং কোন ধরনের একাউন্টে টাকা নিবেন সেটা সিলেক্ট করতে হবে। আর যদি ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা নিতে আগ্রহী হয় তাহলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার, কোন শাখা, সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে।
গর্ভবতী মহিলার পেমেন্টের তথ্য
ছবি/স্বাক্ষর/সংযুক্তি
ষষ্ঠ ধাপ: ষষ্ঠ ধাপে গর্ভবতী মহিলার স্বাক্ষর এবং গর্ভবতী প্রমাণস্বরূপ এনসিসি কার্ড এবং স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে। ফাইলের সাইজ ১০০ কিলোওয়াট এর মধ্যে রাখতে হবে। এরপর সংরক্ষণ বাঁটন থেকে আবেদনটি সংরক্ষিত করতে হবে।
গর্ভবতী মহিলার ছবি/স্বাক্ষর/সংযুক্তি
প্রিন্ট:
সপ্তম ধাপ: আবেদন সঠিকভাবে সংরক্ষিত হলে পিন বাটন থেকে আবেদন পদ্ধতি প্রিন্ট করে নিতে হবে।
গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে
- স্বামী এবং স্ত্রীর দুজনারই ভোটার আইডি কার্ড ফটোকপি।
- স্বামী স্ত্রীর চার কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- গর্ভবতীর প্রমাণস্বরূপ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা হতে স্বাস্থ্যসেবা কার্ড অর্থাৎ এন সি সি কার্ড এর ফটোকপি।
- আবেদন পত্রের হার্ড কপি।
গর্ভবতী ভাতা মাসে কত টাকা পাবে ২০২৪
গর্ভবতী মহিলার কত পাবে তা নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন আছে। সে বিষয়ে আপনাদের পরিষ্কার ধারনা দিবো:
- প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে পাবে।
- মোট ৩৬ মাস পাবে অর্থাৎ ০৩ বছর পর্যন্ত।
- মোট ২৮,৮০০ টাকা একজন গর্ভবতী কাডধারী টাকা পাবে।
অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার আবেদন শেষ তারিখ
অনলাইনে আবেদন করার সময় প্রতি মাসের ০১-২০ তারিখের এর মধ্যে। আবেদন করার পর ২০-২৫ তারিখের মধ্যে আবেদন আপনার সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিতে হবে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে আবেদন করলেই কিন্তু টাকা পাবেন না। ইউনিয়ন/পৌরসাভা/সিটি কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান যে তালিকা ফাইনাল করে পাঠাবে তারাই শুধু টাকা পাবে।
তাই জমা দেওয়ার সময় চেয়ারম্যান কনপার্ম করবেন যে আপনার নাম তালিকায় থাকে। নতুবা আবেদন করা আর না আপনার সমান।
কিভাবে কোথায়, কার মাধ্যমে আবেদন করলে সহজেই পাওয়া যায়
কিভাবে: আপনি অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করবেন। প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরন করে আবেদন সম্পূর্ন করতে হবে।
কোথায়: ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার অথবা তথ্য আপার কাছে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
কার মাধ্যমে: আপনি গর্ভবতীর অনলাইনে আবেদন করার সাথে সাথেই টাকা পাবেন না। তার জন্য অবশ্যই আপনার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সুপারিশ লাগবে। কেননা স্থানীয় প্রতিনিধিরা যে কয়টি আবেদন সুপারিশকৃত তালিকা উপজেলায় পাঠাবে শুধু তার এই ভাতা ভোগী হবেন। সেই জন্য আপনি যা করবেন তা হল- প্রথমে আপনি আপনার জনপ্রতিনিধির (মেম্বার/চেয়ারম্যান) এর কাছে যাবেন।
তারপর আপনার আবদার পেশ করবেন যে, আমার একটি গর্ভবতী কার্ড করে দিতে হবে। তার জনপ্রতিনিধি যদি আপনার সুপারিশ মঞ্জুর করার কথা দেয় তাহলে আপনি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে আবেদন করে আবেদন কপি চেয়ারম্যান অথবা মেব্বার অথবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধ-এর কাছে জমা দিবেন।
গর্ভবতী কার্ড নিয়ে সাধারন প্রশ্ন ও উত্তর
মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে আপনাদের অনেক প্রশ্ন থাকে। যেমন:
গর্ভবতী কার্ড করতে কিকি লাগে?
- গর্ভবতী মহিলার ভোটার আইডি কার্ড।
- গর্ভবতী মহিলার স্বামীর ভোটার আইডি কার্ড।
- ৪ কপি করে ছবি।
- মোবাইল একাউন্ট নম্বর।
- ইউনিয়ন স্বাস্থসেবা কর্তৃক প্রাপ্ত এনসিসি কার্ড।
গর্ভকালীন ভাতা মোট কত টাকা পাবে?
প্রতিমাসে ৮০০ করে মোট তিন বছরে ২৮,৮০০ টাকা পাবে।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে কি গর্ভবতী ভাতার আবেদন করা যাবে?
না,জন্ম নিবন্ধন দিয়ে কি গর্ভবতী ভাতার আবেদন করা যাবেনা।
শেষ কথা
আবেদন করা পর আপনি ভাতা না পেয়ে থাকলে আপনার উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনি সরাসরি মহিলা বিষয়ক অফিসে যোগাযোগ করার মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আরও সকল ভাতার আবেদন করতে প্রয়োজনের পরামর্শ পেতে আমার এই ওয়েবসাইটটি ফলো করুন অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগ করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url