মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে
কে ছিলেন মাদার টেরেজা? মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত
জীবনী সম্পর্কে,
তিনি কোন দেশের নাগরিক ছিলেন,মাদার তেরেসা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য সম্পর্কে জানতে
চান? মাদার টেরেজা সম্পর্কে এবং তার
জীবনী
সম্পর্কে জানতে এই পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এছাড়াও এই
আর্টিকেল পড়ে আরো
জানতে পারবেন মানব সেবায় মাদার তেরেসার
অবদান, তিনি কোন
ধর্মের ছিলেন। কত সালে তিনি মারা যান, কিভাবে তিনি নিজেকে মানব সেবার সারা জীবন
কাটিয়ে দিলেন ইত্যাদি বিষয়াবলি।
ভূমিকা
বাহুবলে নয় বা
ঐশ্বরিক শক্তিতেও
নয় বিশ্বকে শুধু প্রেম এবং ভালবাসা দিয়েই জয় করা সম্ভব তা নতুন করে প্রমাণ
করেছেন আজকের যুগের মাদার টেরেজা। পথের অসহায়
শিশুকে
পরম স্নেহে বুকে টেনে নিয়েছেন। কুষ্ঠ রোগীদের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করেছেন অকাতরে।
কত নিঃস্ব রিক্ত জন তাকে ঘিরে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে নতুন করে জীবনের অর্থ খুঁজে
পেয়েছে। তাই এই পোষ্টেতে মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত
জীবনী
সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত জীবনী
প্রকৃতই তিনি ছিলেন দিনের বন্ধু দরিদ্রের আশ্রয় এবং ভরসা তার কিছুই ছিল না
কিন্তু তিনি ছিলেন রাজরাজেশ্বরী পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের অপুন্ঠিত শ্রদ্ধা
ভালোবাসা।
আঁখিজল মুছাইলে জননী
অসীম স্নেহ তব, ধন্য তুমি গো,
ধন্য ধন্য তব করুনা।
পরনে নীল পাড় সাদা শাড়ি। গলায় ক্রস দুচোখে ফুটে ওঠা অদম্য সাহস এবং স্নেহ মুখে
এক মলিন হাসি নিয়ে ক্রমাগত সেবায় নিয়োজিত এক মহীয়সী নারী নাম তার মারার
টেরেজা। আমরা মুখে মুখে মাদার তেরেসার নাম শুনলেও কতটুকু জানি তার
সম্পর্কে! আসুন জেনে নেওয়া যাক মাদার টেরেজার সংক্ষিপ্ত জীবনী।
মাদার তেরেসা কোন দেশের নাগরিক ছিলেন
তার জন্ম হয়েছিল ১৯১০ সালের ২৬ শে আগস্ট। পিতা-মাতা ছিলেন আলবেনিও। পুরো নাম ছিল
কার্ডিনেস বোজাস্কিউ। শৈশবে মায়ের কাছ থেকেই ধর্মশিক্ষা পেয়েছিলেন। শৈশবে
তার প্রাণের গভীরে ধুনিতো হতে থাকে যীশু খ্রীষ্টের সেবার বাণী। তাই অসুস্থ
আত্মীয়র জন্য ডাক্তার ডাকতে ছুটে ছিলেন লাভ ইয়ার দুর্গম পাহাড়ি পথে প্রবল ঝড়
বৃষ্টির মধ্যে।
আরো পড়ুন: কিভাবে অনলানে নাগরিক সনদের আবেদন করতে হয়
ছোটবেলা থেকেই ধর্মের জর্জিকা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাদারটেরেজা। কলকাতার
সফলরত যুগোসলোভিয়া চিঠি পেয়ে চিঠি পত্র পড়ে অনুপ্রাণিত হন। যোগাযোগ ঘটে
আয়ারল্যান্ডের লোরেটো সন্ন্যাসী দের সঙ্গে। স্থির করেন কলকাতাকেই বেছে নেবেন
কর্মকেন্দ্র হিসেবে। তারপর মাত্র আঠারো বছর বয়সেই আয়ারল্যান্ড হয়ে ভারতে আসেন
মাদারটেরেজা।
মানব সেবায় মাদার তেরেসার অবদান
কলকাতায় এন্টোলি অঞ্চলে সেন্ট মেরিন স্কুলে ভূগোল শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন
তিনি। এখানে কাজ করেছিলেন এরপর কিছুদিনের জন্য পাটনায় গিয়েছিলেন মেডিকেল
ট্রেনিং নেওয়ার জন্য। কিন্তু স্কুলের কাজ মাদারটেরেজা কে সম্পূর্ণরূপে
আত্মতৃপ্তি দিতে পারছিল না। অসহায় গরিব দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে সেবামূলক কাজে
আত্মনিয়োগ করার ফলে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন তার বৃহত্তর কাজের পরিধি।
অবশেষে ১৯৪৬ সালে ট্রেনে দার্জিলিং যাওয়ার পথে ঈশ্বরের আদেশে সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলেন লরেডোর নিশ্চিন্ত জীবন আর নয় এবার সরাসরি গিয়ে দাঁড়াতে হবে অসহায়
মানুষদের পাশে। এই অভিপ্রায় নিয়ে তিনি বস্তিতে বস্তিতে গিয়ে দরিদ্র মানুষের
মধ্যে কাজ করার জন্য ও দ্বাদশ পায়েসের কাছে অনুমতি চাইলেন স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে
তার কাজ ছাড়ার জন্য। যথাসময়ে তিনি অনুমতি ও পেয়েছিলেন।
কিন্তু তার আগেই তিনি কলকাতার মতিঝিলের কাছে বস্তিতে কাজ শুরু দিয়েছিলেন। সেখানে
কোন স্কুল ছিল না। ফাঁকা মাঠ গাছের নিচে ক্লাস শুরু করলেন। এরপর মাটিতে
কার্ড দিয়ে লিখে অক্ষর পরিচয় চলতে লাগলো। কিছুদিন পর এক হৃদয়বান ব্যক্তি তাকে
বসার জন্য কয়েকটি স্কুলের চেয়ার দিলেন এর কিছুদিন পরেই আসলো ব্রেঞ্চ,
ব্ল্যাকবোর্ড, টেবিল ইত্যাদি।
সাহায্য করতে দুই তিন জন শিক্ষাও এগিয়ে আসলেন। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ও
আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। দেখতে দেখতে স্কুল চালু হয়ে গেল। ১৯৪৮ সালের এপ্রিল
মাসে পোপের থেকে অনুমতি পেলেন গ্রাউন ছেড়ে নীল শাড়ি পরার। ১৪ নম্বর ক্রিকলেনের
একটি ছোট্ট ঘর থেকে যাত্রা শুরু করলেন। ১৯৪৯ সালের তার প্রথম সাথী হলেন সুভাষিনী
দাস।
যিনি আজকের সিস্টার অ্যাডন্যাস নামে পরিচিত। ১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠা হল
মিশনারী অফ চ্যারিটি। এই ভবনটি উঠে এলো লোহার সার্কুলার রোডে। বর্তমান তার নাম
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড। এখন সেই ভবনটি মাদার হাউজ নামে পরিচিত। সেখানে
মাত্র পাঁচ টাকা ও দশ জন সহযোগীকে নিয়ে কাজ শুরু করেন।
এরপর শুধুই পথ চলা বিশ্বজোড়া কর্মযোগের পথযাত্রা নীলরতন হাসপাতালের সামনে
পড়েছিলেন এক বৃদ্ধ মহিলা তাকে বুকে টেনে নেন মাদার টেরেজা এবং তার সেবা করলেন
লন্ডনের এক নিঃসঙ্গম মহিলা যিনি নিজেই নিজেকে চিঠি লিখতেন। মাদারটেরেজা তার কাছে
এগিয়ে আসেন। তার জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য।
এছাড়াও মুমূর্ষ শিশুদের বুকে টেনে নিতেন, মাদারটেরেজা পরিত্যাক্ত শিশুদের আশ্রয়
দিতেন, বাধা হাউজের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে শিশু ভবন। কালীঘাটে করা হয়েছে নির্মল
হৃদয় রুগ্ন এবং অসহায়দের সেবা কেন্দ্র। দেখতে দেখতে টিটাগড় দিল্লিতে গড়ে ওঠে
কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করার জন্য। আশ্রম সেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে মুম্বাই, রাজশ্রী,
কাশি, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা,
জাপান, পোল্যান্ড, যগোেশ্লোভিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ৬১ এরও বেশি দেশে
প্রায় ৫০০টি কেন্দ্রে ০৫ লক্ষ-এর বেশি পরিবারকে খাবার দেওয়া হয়। দেওয়া হয়
বস্তিতে ২০ হাজারেরও বেশি শিশুকে ১২৫ টির বেশি স্কুলে পড়ানো হয়। প্রতিদিন
প্রায় এক লক্ষ কুষ্ঠ রোগী সেবা পেত। ছয়টি এক্স নিরাময় কেন্দ্রে রোগীর সংখ্যা
৭০০ এর ও অধিক।
মাদার তেরেসা কোন ধর্মের
কেন মাদারটেরেজা এরকম সেবাকর্মে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। তিনি বলেছেন যে, যীশু
বলেছেন আমি ক্ষুধার্ত আমাকে খাবার দাও, আমি বস্ত্রহীন আমাকে বস্ত্র দাও, আমি
নিরাশ্রয় আমাকে আশ্রয় দাও, আমাকে ভালোবাসা দাও। মাদার টেরেজা বলতেন, যদি চাঁদে
গরিব মানুষ থাকে আমি সেখানে যাব। মাদারটেরেজা ছিলেন ক্যাথলিক সন্ন্যাসী এবং
ধর্মপ্রচারক।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের আবাসস্থান হোয়াইট হাউস তা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন
মাদারটেরেজা এবং অবাক হয়ে বলেছিলেন এখানে কত জায়গা আমার সব গরিব মানুষদের এখানে
আনতে পারতাম তাহলে জায়গাটা ফাঁকা থাকত না। অসহায় এবং আশ্রয়হীনদের তিনি গভীর
ভালোবাসতেন এরই টানে এখানে আনতে পারতাম তাহলে জায়গাটা ফাঁকা থাকতো না।
মাদার তেরেসা মুক্তিযুদ্ধে অবদান
তিনি গভীর ভালবাসতেন এরই টানে তিনি দুর্ভিক্ষ পীড়িত ইথিওপিয়া যুদ্ধবিদ্ধ বিরোধ
ভূমিকম্পের বিপর্যস্ত আর্মেনিয়া সর্বোচ্চ ছুটে গিয়েছেন। ইরাকের যুদ্ধ বন্ধ করার
জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ এবং ইরাকের প্রধান
সাদ্দাম হোসেনের কাছে কলকাতাতেও নিঃসঙ্গ চিত্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন এই নারী।
সেবা করেছেন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই নীল পাড় সাদা শাড়ি এম্বুলেন্স
নিয়ে কলকাতার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়েছে এবং পৌঁছে গেছেন মুমূর্ষমরসে মানুষের
সেবা করার জন্য চার্চ ইতিহাসে এরকম প্রথা বিরুদ্ধে কোন সন্ন্যাসী এরকম ভাবে
এগিয়ে আসেননি। আজ সারা বিশ্বে তার কর্মকাণ্ড দেখে মুগ্ধ।
মাদার তেরেসা কত সালে মৃত্যুবরণ করেন
কলকাতায় যত বিখ্যাত ব্যক্তি এসেছেন মাদারটেরেজা তাদের মধ্যে অন্যতম। দেশে এবং
বিদেশে নানান সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৭৯ মানব সেবার জন্য শান্তিতে তিনি
নোবেল পুরস্কার পান এবং পরের বছরই ভারতরত্ন পুরস্কার পান। অবশেষে ১৯৯৭ সালে
কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মাদার তেরেসা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
- ১৯১০ সালের ২৬ শে আগষ্ঠ যুগোশ্লোভিয়ার স্কোপেজ শহরে এক কৃষক পরিবারে গ্রহন করেন।
- মাদার টেজোর পুরো নাম আগনেস গংস্কা বোজাস্কিউ।
- তিনি ১৮ বছর বয়সে গৃহ ত্যাগ করে একজন মিশনারী হিসেবে যোগদান করেন সিস্টার্স অব লরেটো সংস্থায়।
- তার পিতার নাম ছিল নিকোলাস বোজাকসহিউ।
- তিনি ছিলেন একজন আলবেনিয় বংশদ্ভুত ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং খিষ্ঠ ধর্মপ্রচারক।
- মাদার টেরেজা ১৯৭৯ সালে মানব সেবা করার জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে ভারতরত্ন পান।
- তিনি ১৯৬২ সালে পদ্মশ্রী পান।
- ১৯৩১ সালে ২৪ শে মে তিনি সন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহন করেন।
- ১৯৯৭ সালে ৫ ই সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
- মাদার টেরেজা শুধু ভারতবর্ষের মানুষ নয় তিনি বিশ্বের সকল মানুষকে ভালবাসতেন।
শেষ কথা
মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ সেবা ও ভালোবাসা দিয়ে যারা মানব সমাজে অমরত্ব লাভ
করেছেন মাদারটেরেজা তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি নিপীড়িত গরিব অসহায় মানুষের পাশে
দাঁড়ানোর বিংশ শতাব্দীর জননী। মাদারটেরেজা তথা আরো অন্যান্য বিখ্যাত মনীষীদের
জীবনী সম্পর্কে জানতে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং পোস্টটি ভালো লাগলে
সবার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url