ওয়ারিশ সনদ ফরম পূরণ করার নিয়ম
ওয়ারিস
সনদ কি? ওয়ারিশ সনদ ফরম পূরণ করার নিয়ম কি?
অনলাইনে
ওয়ারিশ সনদের আবেদন কিভাবে করতে হয়? এ সকল প্রশ্ন আপনার মনে হয়তো বা ঘোরাঘুরি
করছে। নয়তোবা আপনার
ওয়েশান
সনদ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কিন্তু কিভাবে কোথা থেকে কার মাধ্যমে সনদ নিতে হয়
বুঝতে পারছেন না। সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কিভাবে আপনি
ওয়ারিশ
পাবেন তা জানতে হলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
এই
আর্টিকেলটি
পড়ার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে মৃত ব্যক্তির
ওয়ারিশ
হওয়ার কার কার যোগ্যতা আছে বা কে ওয়ারিশ হতে পারবে আর কে পারবে না।
ওয়ারিশ
সনদ নিতে কি কি কাগজ পত্রাদি লাগবে এবং মৃত ব্যক্তির
উত্তরাধিকারী
কারা কারা হতে পারবে এ সকল বিষয় সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারবেন।
ভূমিকা
সাধারণত কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর ঔ মৃত ব্যক্তির যে সকল আত্মীয়-স্বজন
জীবিত আছে তারাই ঔ মৃত ব্যক্তির
ওয়ারিশ। তবে সকল আত্মীয় স্বজন মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ বলে গণ্য হবে না। তাই কিভাবে
ওয়ারিশ সনদ ফরম পূরণ করতে হয় এবং কিভাবে
ওয়ারিশনদের
আবেদন করতে হয় আবেদন করতে কি কি লাগে, সম্পত্তির বন্টন কিভাবে হয় ইত্যাদি বিষয়
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ওয়ারিশ সনদ ফরম পূরণ করার নিয়ম
ওয়ারিশান সনদ ফরম সঠিকভাবে পূরণ করার জন্য আগে আপনাকে জানতে হবে ওয়ারিশ সনদ কি।
এ বিষয়ে না জানলে আপনি সনদ পূরণ করতে পারবেন না।
ওয়ারিশান সনদ কি: সোজাভাবে বলতে গেলে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনরায়
ওয়ারিস। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে কোন ব্যক্তি মারা যাবার পর তার রেখে যাওয়া
সম্পত্তির যারা যারা ভাগীদার বা যারা যারা অংশীদার তাদেরকে বলা হয় ওয়ারিশ। আর
এই ওয়ারিশ প্রমাণ করার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সনদ গ্রহণ করা হয়
তাকেই বলে ওয়ারিশান সনদ।
আরো পড়ুন: কিভাবে অনলানে নাগরিক সনদের আবেদন করতে হয়
ওয়ারিশান সনদ মৃত ব্যক্তির সত্যিকারের অংশীদারকেই নির্দেশ করে। তাই যে কেউ মৃত
ব্যক্তির সম্পত্তি নিতে পারবে না। আপনারা অনেকেই সনদ পূরণ করতে পারেন না। কারণ
কিভাবে মৃত ব্যক্তির ও আসেন সনদ পূরণ করতে হয় সে সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই নেই।
মৃত ব্যক্তি কারা কারা ওয়ারিশ হতে পারে সে সম্পর্কেও যদি আপনার কোন ধারণা না
থাকে তাহলে দেখে নিন কিভাবে সনদ ফরম পূরণ করতে হয়।
মৃত ব্যক্তির তথ্য
- প্রথমে মৃত ব্যক্তির নাম
- মৃত ব্যক্তির পিতার নাম
- মৃত ব্যক্তির মাতার নাম
- মৃত ব্যক্তির স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
- মৃত্যুর স্থান
- মৃত্যুর তারিখ
- মৃত্যুর কারণ
- মৃত ব্যক্তির ধর্ম
- ওয়ারিশগনের তালিকা
ফর্ম-এর সবার নিচে ওয়ারিশগণের তালিকা লেখার ঘর দেখতে পাবেন সেখানে আপনি মৃত
ব্যক্তির ওয়ারিরগণের তালিকা পর্যায়ক্রমে লিখতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে
ব্যক্তি মারা গেছে সে ব্যক্তির স্ত্রী ছেলে-মেয়ে আর যদি মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা
বেঁচে থাকে তাহলে পিতা মাতার নাম সবার প্রথমে লিখতে হবে। মৃত ব্যক্তির যদি কোন
ছেলে মেয়ে না থাকে তাহলে ওই মৃত ব্যক্তির ভাই এবং ভাইয়ের ছেলেরা হিসেবে গণ্য
হবে।
অনলাইনে ওয়ারিশ সনদের আবেদন কিভাবে করতে হয়
ওয়ারিশান সনদ এর ফরম যেকোনো ফটোকফির দোকান থেকে সংগ্রহ করে পূরণ করার পর
চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শীল ও স্বাক্ষর করে নিলেই ওয়ারিস সনদ ব্যবহারযোগ্য হয়ে
যেত। কিন্তু বর্তমানে সকল সনদ স্মার্ট করার জন্য সনদের রূপ দিয়েছে সরকার। তাই
ওয়ারিশান সনদ পেতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি
খুব সহজেই ঘরে বসে ওয়ারেশন সনদের আবেদন করতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
কিভাবে নাগরিক সনদ ডাউনলোড করবেন
এর জন্য আপনাকেসেবা অটোমেশন সিস্টেম এ একটি একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে।
অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করার পর আপনার প্রোফাইল সম্পূর্ণ করতে হবে।
প্রোফাইল সম্পন্ন হলে আপনি সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আপনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে যদি অনলাইনে ওয়ারিশান সনদ এর সিস্টেম চালু হয়ে না
থাকে তাহলে আপনি সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন ফরমটি নিম্নরূপ
প্রথমেই মৃত ব্যক্তির নাম লিখতে হবে। মৃত ব্যক্তির নাম অবশ্যই জমির খতিয়ান দেখে
লিখবেন। মৃত ব্যক্তির পিতা ও মাতার নাম, মৃত্যু তারিখ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। সবশেষে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণের নাম
পর্যায়ক্রমে লিখতে হবে। যে ব্যাক্তি ওয়েশন সনদ উত্তোলন করবেন নিবেদক হিসেবে
তিনি স্বাক্ষর করে দিবেন। সত্যায়নকারী হিসেবে ইউপি মেম্বার অথবা মহিলা মেম্বার
সিল সহ স্বাক্ষর নিতে হবে।
ওয়ারিশ সনদের জন্য কি কি লাগে
আবেদনপত্র পূরণ করার মাধ্যমেই আপনি ওয়ারেশন সনদ পাবেন না অথবা ঘরে বসে অনলাইনে
আবেদন করার ফলেও আপনি ওয়ারিশান সনদ পাবেন না তার জন্য আপনাকে কয়েকটি
কাগজপত্রাদি আবেদন পত্রের সাথে ইউনিয়ন পরিষদে দাখিল করতে হবে। যেমন
- মৃত ব্যক্তির প্রমাণস্বরূপ মৃত্যুর সার্টিফিকেট।
- মৃত ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ডে ফটোকপি যদি থাকে।
- আবেদনকারীর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- প্রত্যেক ওয়ারিসের ভোটার আইডি কার্ডে ফটোকপি।
- মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস গনের বাড়ির কর আবাসিক হোল্ডিং ট্যাক্স এর ফটোকপি।
- জমির খতিয়ান এর ফটোকপি।
- আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- আবেদন পত্রে সত্যায়নকারী হিসেবে ইউপি মেম্বারের স্বাক্ষর নিতে হবে।
কিভাবে ওয়ারিস সনদ পাবেন?
সত্যেনকৃত আবেদন পত্র এবং আবেদনপত্রের সাথে উপরোক্ত কাগজপত্রাদি এটাস্ট করে
ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনের সত্যতা যাচাই করে
পরবর্তীতে আপনাকে প্রদান করা হবে।
কোন ছেলে না থাকলে সম্পত্তি যেভাবে বন্টন হবে
মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে মৃত ব্যক্তির ভাইয়ের ছেলেরা ঐ সম্পত্তির
ওয়ারিশ হিসেবে গণ্য হবে। মৃত ব্যক্তি কোন ছেলেমেয়ে না থাকলে কিভাবে সম্পত্তি
বাটোয়ারা হয় কে কতটুকু অংশ পাই তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- মৃত ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান ও স্ত্রী বেঁচে থাকে তাহলে আট ভাগের একভাগ স্ত্রী অংশীদার হবে।
- যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে চার ভাগের এক ভাগ অংশীদার হবে স্ত্রী।
- স্ত্রী মারা গেলে স্বামী ও পুত্র সন্তান বেঁচে থাকলে স্বামী ওই সম্পত্তির চার ভাগের একভাগ অংশীদার হবে।
- পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে দুই ভাগের এক ভাগ অংশীদার হবে কন্যা।
- আর মেয়ে সন্তান হলে দুই ভাগের একভাগ অংশীদার হবে যদি কোন ছেলে সন্তান না থাকে।
ওয়ারিশ সনদ নিয়ে জনসাধারণের প্রশ্ন ও উত্তর
class="alert info" আরো পড়ুন: অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়মমৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী কি?
মুসলিম আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি যারা ভোগ দখল করবে বা সম্পত্তি পাবার
অধিকার রাখে তারাই হচ্ছে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির নিকট
আত্মীয়রাই উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য হবে।
বাবা যদি কোন ছেলেকে সম্পত্তি না দেয় সেক্ষেত্রে কি করণীয়?
পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় যদি তার সম্পত্তি একটি সন্তানকে রেজিস্ট্রি করে দেয়
অথবা বিক্রি করে দেয় সে ক্ষেত্রে আপনি আরেক সন্তান হয়েও কিছুই করার থাকবে না।
কেননা তার সম্পত্তি তার ইচ্ছা মতোই রেজিস্ট্রি অথবা বিক্রি করতে পারবে এটা তার
আইনত অধিকার। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর কোন ভাই বা কোন বোন জোরপূর্বক সে
সম্পত্তি দখল করলে আপনি আইনের সহায়তা নিয়ে আপনার প্রাপ্ত সম্পত্তি দখল করতে
পারবেন।
মুসলিম ফারাজ আইন অনুযায়ী সম্পত্তি সঠিক বন্টন
- মৃত ব্যক্তির পিতা মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, মাতা ৬ ভাগের এক ভাগ, স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ বন্টনের পর যে সম্পত্তি অবস্থিত থাকবে সে সম্পত্তি ছেলে ও মেয়েরা পাবে।
- মৃত ব্যক্তির কোন ছেলে সন্তান যদি না থাকে তাহলে তার স্ত্রী আট ভাগের একভাগ, তার কন্যা দুইভাগের এক ভাগ, মা ৬ ভাগের এক ভাগ বন্টনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি মৃত ব্যক্তির পিতা পাবে।
শেষ কথা
আপনি সঠিকভাবে ওয়ারিশন সনদ নিতে ব্যর্থ হলে, আবেদন করতে ব্যর্থ হলে, আবেদন ফরম
পূরণ করতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এসে পরামর্শক্রমে অথবা আপনার
এলাকায় যারা জমি সংক্রান্ত ভালো বোঝে এমনকি কোন মোহরি থেকে বুঝে নিয়ে তারপরে
জমির পরবর্তী কার্যক্রম করতে পারেন। আরো প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এবং
জমি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং ফল দিয়ে রাখুন
পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url