পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - আমাশয় রোগের কারন ও প্রতিকার
সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি পুরাতন আমাশয় রোগের
ঘরোয়া চিকিৎসা
সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? পুরাতন আমাশয় রোগের
ঔষধ
কোনটি যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি মূলত আপনার জন্য। কেননা এই এই পোস্টের
মাধ্যমে আমি আপনাদের
আমাশয়
রোগের কারণ লক্ষণ প্রতিকার এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আরো যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা
হল, আমাশার রোগীদের
খাবারের তালিকা
কি কি, ডাক্তারের ওষুধ ছাড়াই
কিভাবে ঘরোয়া
উপায় অবলম্বন করে
আমাশয়
রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। তাই আমাশয় সংক্রান্ত যাবতীয়
বিষয়ে বলি জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোষ্ট সূচীপত্রঃ পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাদের দেশের প্রায় মানুষই পুরাতন
আমাশয়
রোগে ভুক্তভোগী। যিনারা এই
রোগে সংক্রামিত
তারা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আমাশয়
পেটের এমন একটি রোগ যা সার্বক্ষণিক
পেটে ব্যথা
সহ ডায়রিয়া ও হতে পারে।
আমাশয়
রোগের প্রথমদিকে শরীর অনেকটা দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হয়ে যায়, পরবর্তীতে পানির
অভাবে
ডিহাইড্রেশন
হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমাশয় রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে
জানা অত্যন্ত জরুরী।
পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাশয় রোগ সাধারণত তিন থেকে চার দিন সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে
থাকে। কিন্তু কিছু কিছু আমাশয় দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সবসময় হয়তোবা
সমস্যা হয় না কিন্তু কিছুদিন পর পর প্রায়ই আমাশয় রোগে ভুগতে দেখা যায় অনেক
মানুষকে। আর এ ধরনের আমাশয়কে পুরাতন আমাশা বলা হয়ে থাকে।
যার পুরাতন আমাশয় রয়েছে তিনি কিছুদিন পরপরই এই রোগে আক্রান্ত হন। যা অত্যন্ত
অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক। পুরাতন আমাশয় রোগের কিছু
ঘরোয়া টোটকা
বা চিকিৎসা রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি খুব ভালো ফলাফল পেতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে
নেওয়া যাক আমাশয় রোগের
ঘরোয়া চিকিৎসা
সম্পর্কে।
থানকুনি পাতার রস
আমাশা রোগ হলে আমাশয় সাথে জ্বর এ দুটোই একসাথে হতে পারে। আমাশয় রোগটি সাধারণত ছোট
বাচ্চাদের অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে তানকুনি পাতার রস
খুব কার্যকরী। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে তানকুনি পাতা বেশি পরিমাণে দেখতে পাওয়া
যায়। ৮ থেকে ১০ টি বা থানকুনি পাতা তুলে ভালোভাবে পিষে রস বের করে ছেকে খেতে
পারেন।
যদিও এই পাতার রসের স্বাধ অনেকটাই তেতো। সে কারণে আপনি মিষ্টি জাতীয় কিছু যেমন
মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনি যদি এই পাতার রস গরম করে খেতে পারেন তাহলে আরো বেশি
উপকৃত হবেন।
গুড়ের শরবত
আমাশয় রোগীদের গুড়ের শরবত খুব উপকারী গুণের শরবত মানুষের পেট পরিষ্কার করতে
সহায়তা করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ গুড়ের শরবত খেলে আমাশা রোগের
প্রদোহ দূর করতে সাহায্য করে প্রয়োজনে আপনি গুড়ের শরবতের সাথে কাঁচা হলুদ
এবং ছোলা খেতে পারেন।
অর্জুন গাছের ছাল
আমাশা রোগের জন্য অর্জুন গাছের ছাল বেশ উপকারী। অর্জুন গাছ থেকে ছাল তুলে নিয়ে
চার থেকে পাঁচগ্রাম পরিমাণে ছাল নিয়ে পিষে রস বার করে খেতে পারেন। অর্জুন আছে
ছাল অনেকটাই করা কসাই রস। আর সে কারণে অনেকের অর্জুন গাছের ছাল এর রস খেলে
কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন সেটা হচ্ছে ছাগলের দুধের
সাথে সিদ্ধ করে সেই রস খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া সম্ভাবনা অনেকটাই কম হয়।
জাম এবং আম পাতা রস
প্রথমে আপনি ৮ থেকে ১০ টি আম পাতা গাছ থেকে নিয়ে এসে এটিকে থেতিয়ে রস বের করে
নিন। এই রস প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ গরম জলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এই
প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে আমাশা রোগ অনেকটাই সেরে যাবে।
পেঁপে
যেনারা আমাশা রোগে ভুক্তভোগী তাদের অবশ্যই যুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
তাদেরকে অবশ্যই পেঁপে তরকারি খাওয়া পেটের জন্য উপকারী হবে। আর সেজন্য খাবার
ছেড়ে পেঁপের তরকারির ঝোল খেলে আমাশা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
কাঁচা কলা
পেঁপের সাথে আপনি কাঁচা কলা তরকারি ঝোল করে খেতে পারেন। কাঁচা কলার সাথে ডাটা
গাজর এ জাতীয় সবজি দিয়ে তরকারি ঝোল খেলে আমাশা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন পেতে
পারেন।
শুঠের গুড়া বা শুকনো আদা
পুরাতন আমাশা রোগীদের জন্য আরো একটি উপকারী ঘরোয়া টোটকা হলো শুকনো আদা। প্রতিদিন
এক গ্রাম শুকনো আদা গোঁড়া গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে পেটের পরিপাকতন্ত্র
পরিষ্কার হয় এবং আমাশা দূর করতে সহায়তা করে।
তেতুল পাতা
পুরাতন অংশ তেতুল পাতার রস খুবই উপকারী। প্রতিদিন তার থেকে ৬ গ্রাম তেতুল পাতা
সিদ্ধ করে নিয়ে থেকে রস বের করে এরপর নিয়ে জিরান ফোড়নে শেতলে নিয়ে দিনে অন্তত
দুই থেকে তিনবার খেলে পুরাতন আমাশার সঞ্চিত আম পেট থেকে বের করতে সহায়তা করে।
এতে করে পুরাতন আমাশয় দূর হওয়ার অত্যন্ত সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
বতুয়া শাক
বতুয়া শাক বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। কিছু অঞ্চলে আবার একে বলা হয়ে
থাকে। যাইহোক এই শাক এর রস প্রতিদিন তিন থেকে চার চামচ হালকা একটু গরম করে দুধের
সাথে মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে মহিষের দুধ একসাথে সব
থেকে ভালো।
ডালিম গাছের ছাল
ডালিম গাছের ছালে সিদ্ধ করে এর রস খেলে মানুষের আমাশয় রোগে বেশ উপকার মিলে। তবে
বতুয়া শাকের সাথে ডালিম গাছের ছালের রস মিশিয়ে খেলে আরো বেশি উপকার পাবেন।
আমড়া
আধা কাপ জলে তার থেকে ৫ গ্রাম আমড়ার আঠা এবং তার সাথে আমড়া গাছের ছালের রস
ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। এরপর মিশ্রণটির সাথে একটু চিনি মিশিয়ে দিনে অন্তত দুইবার
খেলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আমাশয় রক্ত পড়া এবং পুরাতন আমাশয় চলে যাবে।
কুলেখাড়ার রস
পেটে যদি দীর্ঘ সময় ধরে আমাশয় অর্থাৎ অম্বল জমে থাকে তাহলে পেট প্রচন্ড শক্ত এবং
ব্যথা অনুভব হয়। প্রতিদিন সকালে কুলেখাড়ার রস তার থেকে পাঁচ চামচ রস খেলে পেটের
জমে থাকা মল বেরিয়ে যায় এবংকুলেখাড়ার রস মধু মিশিয়ে খেলে আরও বেশি উপকার
পাবেন।
গোলমরিচ
আমরা সচরাচর গোলমরিচের নাম শুনে থাকি কিন্তু এটা সম্পর্কে হয়তোবা জানিনা। আমাশয়
রোগীদের অনেক সময় এমন একটা অনুভব হয় যে মনে হয় যে মল বের হবে কিন্তু বাথরুমে
অনেকক্ষণ বসে থাকার পরেও অনেক কুতুনির পরেও মল বের হয় না।
এক্ষেত্রে আরও বেশি কষ্ট অনুভব হয়। এ সময় আপনি গোলমরিচ এর ১-২ গ্রাম গুড়া পানির
সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার সকালে এবং বিকেলে খেলে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে এই
সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কুলেখাড়া পাতার রস
পেটে আমাশয় কারণে পায়ের অপরি অংশে ভর দিয়ে হাঁটার কারণে অনেক সময় পা ফুলে যেতে
দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনি কুলেখাড়া পাতার রস তিন থেকে চার চামচ একটু গরম পানির
সাথে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে দুইবার করে খেলে আমাশয় সমস্যা অনেকটাই দূর হয়।
তবে এর সাথে আপনি তিন থেকে চার ফোঁটা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
মুথা
অনেক সময় আমাশা রোগের জন্য পেট কোন কোণে ব্যথা করে। এক্ষেত্রে আপনি মুথার কাথ
খেলে আমাশয় এবং পেটের ব্যথা দুটোই কমাতে সাহায্য করে।
ডাব এবং লেবু
আমাশা রোগীদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায় যার কারণে আমাশয় রোগের
শরীর ডিহাইড্রেশন এর শিকারা সম্ভাবনা থাকে। এই ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি লাভের
জন্য ঘন ঘন লেবুর এবং ডাবের পানি খাওয়া উচিত। এর ফলে শরীরের দুর্বলতা ও অনেকটাই
কমে যায়। ডাবের পানি এতটা উপকারী যে বড় বড় হাসপাতালে স্যালাইন খাওয়ার
পরিবর্তে চিকিৎসকরা ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে না।
বাটার মিল্ক
প্রতিদিন দুই থেকে তিন গ্লাস পান করুন এতে আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। গবেষণায়
দেখা গেছে যে বাটামী ব্যবহার করার ফলে আমাশয় উপশম করতে সাহায্য করে।
হরিতকী
আধা চামচ হরিততির গুড়া এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন এতে আমশয় থেকে
অবসর এবং রাতে ভালো ঘুমাতে সহায়তা করবে। তাছাড়াও হরিতকির গুড়া ডায়ারিয়া এবং পেট
ফাপা দূর করতে সাহায্য করে।
আপেল সিডার ভিনেগার
এক গ্লাস গরম পানির সাথে আপেল ভিগেনার মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার পান করুন এতে আমার
সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কড়া চা
একটা পানির সাথে দুই থেকে চার চামচ কালো পাতা যা ভালোভাবে ফুটিয়ে সাথে লেবুর রস
মিশিয়ে দিনে অন্তত দুইবার খেলে আমাশয় সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
গাজর
গাজর এবং ছোট বিটরুট এ দুটি উপাদানের ভালোভাবে ছাল ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে জুস
করে খেলে আমাশা রোগীদের জন্য খুবই উপকার মিলবে।
আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি
সাধারণ আমাশয় রোগ থেকে মানুষ তিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে
কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে।
যার জন্য রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে
পড়ে। ডাইসেন্ট্রি অর্থাৎ ডায়রিয়া রোগের সমাধানমূলক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু
অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: তল পেটের চর্বি কমানোর ঔষধ
এর মধ্যে রয়েছে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, সেফট্রিয়াক্সোন এবং পিভমেসিলিনাম। আমাশা
রোগীদের ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা দূর করতে এই ওষুধগুলো বেশ কার্যকরী। যেকোনো
ধরনের পরজীবী শরীরে প্রবেশ করার মাধ্যমে অ্যামেমিক আমাশয় দূর হয়ে থাকে। এর পরে
যদি ছত্রাক কে দূর করার জন্য মেট্রোনিডাজল এবং টিনিডাজল এই দুটি ওষুধ চিকিৎসা
হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
আমাশয় রোগিদের জন্য খাবার খুবই গুরুত্বপূর্নর বিষয়। কারন খাবারে অনিয়ম হলে আমাশয়
আরো বাড়তে পারে। আর সে কারনে আমাশয় রোগিদের কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন খাবার
থেকে বিরত থাকতে হবে সে সম্পর্কে জানা অত্যান্ত জরুরি। নিম্নে আমাশয় রোগিদের একটি
সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখ করা হল।
যে খাবার গুলো খাবেন
- সাদা ভাত
- রুটি
- কলা
- চর্বিহীন মুরগির মাংষ
- দই
- ওটমিল
এছাড়াও যে খাবার গুলো আমাশয় খাবারের তালিকা রাখা উচিত তা হল।
সাধারনত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডাইরিয়া বা আমাশয় কমাতে সাহায্য করে। যেমন সাদা ভাত,
কলা, সোডা ক্র্যাকার, টোস্ট, আপেল ইত্যাদি। খাবারের তালিকা হলো:
- ফল
- ডিম
- সবজি
- কলা
- লেবুর রস
- ডালিম
- আপেল
- আলু
যে খাবার খাবেন না
যে কোন ধরনের মসলা ও ঝাল জাতীয় খাবার যা পেটের পরিপাকন্ত্রকে অসিস্থকর অবস্থার
সম্মখীন করে। যে খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- চিনিযুক্ত খাবার থেকে বিরত খাকুন।
- বেশি মাত্রায় ফাইবার রয়েছে এমন খাবার খান।
- তেল ও ভাজা খাবার থেকে দূরে থাকুন।
- অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়রিয়া হলে দুধ এবং দুদ্ধজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল।
- ক্যাফেইনযুক্ত খাবার অত্যাৎ যেকোন ধরনের ড্রিংক্স জাতীয় খাবার যেমন: স্পিড, কোকোলা, বা অন্য যে কোন ধরনের পানীয় খাবার থেকে রিত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় খরম খাবার না খাওয়ায় উচিত।
পুরাতন আমাশয় এর কারন
ব্যাকটেরিয়া বা প্রোটোজোয়া ও ভাইরাস জনিত কারনে আমাশয় রোগ হয়ে থাকে। দূষিত
খাবার, পরিষ্কার পরিচ্ছনতার অভাবে এবং খাবার পানির মাধ্যমে এই বিস্তার লাভ করে
থাকে। যখন এই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শরীরের অন্ত্রে বসবাস করে তখনি আমাশয় রোগের
সংক্রামন অনেকটা বেড়ে যাবে। সংক্রামিত রোগীর মল দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যায়।
তাছাড়াও অরিরিক্ত দুৎচিন্তার কারনে এই রোগ হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: দাঁতের শিরশিরানি দূর করার উপায়
শিগেলা ,সালমোনেলা এসকল ব্যাকটেরিয়ার কারনে আমাশয় সৃষ্টি হয়। এগুলো খুবই ক্ষতিকর
ব্যাকটেরিয়া যা একটি মানুষের শরীরে অন্ত্রে খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। শিগেলা
ব্যাকটেরিয়া প্রভাব আমেরিকায় বেশি পরিমানে লক্ষ করা যায়। দক্ষিন এশিয়ার
দেশগুলোতেও এই ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। পেটের কৃমির কারনেও এই রোগ হতে
পারে। যেসকল মাধ্যমের দ্বারা এই রোগের ব্যাক্টেরিয়ার মানুষের শরীরের বিস্তার লাভ
করে তা হল।
- খাবার পানীয় জলের দ্বারা
- দূষিত খাবার পানির দ্বারা
- পচা ও নষ্ট খাবার দ্বারা
- সংক্রামিত ব্যক্তির দ্বারা।
- পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর ভালভাবে হাত পরিষ্কার না করার ফলে।
- দূষিত জলে গোসল করলে বা সাতার কাটলে।
- আগে থেকেই আমাশয় রোগে সংক্রামিক কোন মানুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করলে।
পুরাতন আমাশয় এর লক্ষণ
পুরাতন আমাশয় বা আইবিএস এমন একটি রোগ যার লক্ষন সবসময় অনুভব হবে না। কিছু দিন পর
পর খাবার সমস্যা বা ছোট খাট সমস্যার কারনে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা
দেখা দেয়। এই রোগ হলে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
আরো পড়ুন: পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমাদের দেশের অনেক মানুষ পুরাতন আমাশয় ভুগছেন। সঠিক সময়ে এই রোগের লক্ষন বুঝতে
পারলে এবং চিকিৎসা করা খুব সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। যেসকল উপসর্গ দেখা
দিলে আপনি বুজতে পারবেন যে আপনার আমাশয় রোগ হয়েছে তা হল।
- পেট ফাপা অথ্যাৎ পেটে অত্যাধিক গ্যাস অনুভূত হওয়া।
- পেটে ভুটভাট শব্দ হওয়া।
- মল ত্যাগের ভাব হওয়া সত্ত্বে ও পরিষ্কারভাবে বাথরুম না হওয়া।
- পেট কামড় ধরে থাকা।
- পেটে অসহ্য যন্ত্রনা অনুভূত হওয়া।
- ঘনঘন পায়খানা হওয়া।
- হটাৎ করেই পেটে কামড় দিয়েই বাথরুমের চাপ সৃষ্টি হওয়া।
- খাওয়ার পর বাথরুমে চাপ হওয়া।
- মল অত্যাধিক নরম হওয়া।
- আবার কখনো কখনো অনেক শক্ত হওয়া।
- পায়খানার সাথে আম যাওয়া।
- অনিয়মিত মলত্যাগ হওয়া।
- বমি বমি ভাব হওয়া।
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
- প্রস্রাব কমে যাওয়া।
- খুব বেমি পরিমানে পানি টান অনুভূত অত্যাৎ তৃষ্ণা লাগা।
- মাঝে মাঝে সর্দি ও জ্বর হওয়া।
- পেশীতে খিচুনির মত ব্যাথা হওয়া।
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
- শরীরের অত্যাধিক দুর্বল হওয়া।
- চেহারা পাতলা হয়ে যাওয়া।
- ডায়রিয়া হওয়া।
এই লক্ষণ গুলো সাধারন একটা মানুষের শরিরে ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। কোন
কোন সময় ৮-১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
আমাশয় রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
আমাশা রোগের চিকিৎসার জন্য প্রথমে অবশ্যই সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যাবশক। আমাশয়
সাধারণত দু ধরনের হয় যেমন অ্যামিবিক আমাশয় ও ব্যাসিলাস আমাশয়। রোগ নির্ণয়
নিশ্চিত হয়ে গেলে লক্ষণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা প্রদান করা হয় যদি
আমার লক্ষণ গুলো তীব্র না হয় তাহলে এ ধরনের আমাশয় ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি হিসেবে
হয় নির্ণয় করা হবে। এ ধরনের আমাশায় তেমন কোন ওষুধের প্রয়োজন প্রয়োজন হয় না।
আমাশয় রোগের প্রতিকার
আমাশয় বিভিন্ন ধরনের হয়। তবে যে কোন ধরনের আমাশয় রোগের প্রথম এবং প্রধান চিকিৎসা
হলো প্রতিবার মলত্যাগের পর খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। যেহেতু আমাশয় হলে শরীর
দুর্বল হয়ে যায় তাই রোগীতে অনেকটা বিশ্রাম নিতে হবে। আমাশয় হলে শরীর থেকে প্রচুর
পরিমানে পানি বেরিয়ে যায়। সে কারনে অনেক সময় রোগীর ডিহাইড্রেশান হওয়ার সম্ভবনা
থাকে।
ডিহাইড্রেশান প্রতিরোধ করার জন্য তরল এবং প্রচুর পরিমানে পুষ্টিকর খাবার খেতে
হবে। আমাশয় যদি খুব বেশি হয় তবে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী মেট্রোনিডাজল (৪০০
মি.গ্রা) দিনে তিন বার ০৩-০৪ দিন খেতে পারেন।
আমাশয় রোগের প্রতিরোধ
- দূষিত খাবার পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
- যেখান সেখান থেকে পানি পান রা করা।
- পচা ও নষ্ট খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
- সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা
- পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর ভালভাবে হাত পরিষ্কার করা।
- আগে থেকেই আমাশয় রোগে সংক্রামিক কোন মানুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক না করা।
- তেল ও ভাজা পোড়া থেকে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
- গ্যাষ্ট্রিক রোগেদের জন্য মসলা জাতীয় খাবার না খাওয়া।
আমাশয় হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
ডিম নিঃসন্দেহে পুষ্টিকর খাবার। অনেকেই ডায়রিয়া বা আমাশা হলে ডিম খাওয়া থেকে
বিরত থাকেন। ডিম ধীরে ধীরে হজম হয়। তাই দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে পুষ্টি যোগানের জন্য
ডিম খুবই উপকারী খাবার। যেহেতু আমাশয় হলে দ্রুত হজম হয় সে কারনে শরীরে দীর্ঘ সময়
ধরে শরিরে পুষ্টি যোগানের জন্য এ ধরনের খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।
তাই নিঃসন্দেহে বলাই যায় ডায়রিয়া বা আমাশয় হলে ডিম খাওয়া যাবে। তবে এর
পাশাপাশি খুব সহজে হজম হয় এ জাতীয় খাবার খেতে হবে। উন্নত দেশে আর ডায়রিয়া বা
আমাশার রোগীদের সরাসরি ডিম খেতে না দিয়ে ডিম প্রক্রিয়াজাত করে অন্য খাবারের
সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। তাই তাদের শরীরের পুষ্টি ঘাটতি কমে যায়।
আরো পড়ুন: পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা
যেহেতু ডিম খুব সহজে হজম হয় না এ বিষয়টি ভেবে ডিম ঘা একেবারে বন্ধ করা উচিত
নয়। কারণ এতে পুষ্টি এবং শরীরের শক্তি ঘাটতি হয়। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম
খেলে ডায়রিয়া রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টি ও শক্তির ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে।
ডিম খাওয়ার আগে ভালোভাবে সিদ্ধ অথবা রান্না করে খেতে হবে। অর্ধসিদ্ধ ডিম কোন
অবস্থাতেই ডায়রিয়া রোগীদের খাওয়ানো যাবে না।
লেখকের মন্তব্য
আমাশা একটি পানিবাহিত সাধারণ রোগ। এই রোগ শরীরে তিন থেকে চার দিন সর্বাধিক এক
সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু আমাশয় বহুদিন ধরেই শরীরের অবস্থান
করে। মাঝেমধ্যে ভালো হয় আবার মাঝেমধ্যে সংক্রামিত করে। সে কারণে দীর্ঘমেয়াদী
আমাশয় দূর করার জন্য ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
চিকিৎসা গ্রহণ এবং ওষুধ সেবন করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url