বাচ্চাদের জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত - বাচ্চার জ্বর হলে করণীয় কি
আমরা অনেকেই জানেননা বাচ্চাদের জ্বর হলে কি
ঔষধ খাওয়া
উচিত এবং বাচ্চার
জ্বর হলে
করণীয় কি। বাচ্চাদের
অসুখ বিসুখ
নিয়ে এখানে সেখানে অনেক দৌড়াদৌড়ি করার পরও কোন সুফল পাননা। তার কারণ হচ্ছে
আপনি হয়তোবা জানেন না বাঁচার জ্বর হলে কি কি করতে হয় এবং কোন কাজটি করা থেকে
বিরত থাকতে হয়। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি বিস্তারিত পড়ুন।
এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি শুধু বাচ্চাদের জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত এই
সম্পর্কে ছাড়াও আরো যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা হচ্ছে এক বছর
শিশুর জ্বর হলে
কি করা উচিত বা করনীয় কি আট মাসের শিশুর জ্বর হলে কি করতে হবে জ্বরের জন্য কোন
ওষুধটি ভালো ইত্যাদি।
ভূমিকা
জ্বর একটি সাধারণ অসুখ।
জ্বর সাধারণত
অন্য অসুস্থতার কারণে ও হতে পারে। শিশুদের জন্য জ্বর খুব মারাত্মক হয়ে থাকে কারণ
জ্বর থেকে শিশুর
নিউমোনিয়া সহ
আরো অনেক রোগ হতে পারে। তাই শিশুদের জ্বর হলে করণীয় কি, জ্বর হলে শিশুটি গোসল
করাবেন কিনা, জ্বরের জন্য কোন ওষুধ ভালো এক মাসের শিশুদের জ্বর হলে কি করা উচিত
বা কোন ওষুধ খাওয়ানো উচিত ইত্যাদি বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো।
বাচ্চার জ্বর হলে করণীয় কি
ডাক্তার জ্বর হলে বাচ্চাকে অবশ্যই বেশি বেশি বিশ্রাম দিতে হবে। যদিও বাচ্চারা সব
সময় খেলাধুলা দৌড়াদৌড়ি করতে পছন্দ করে। তারপরও তাদেরকে বিশেষ করে যখন জ্বর হবে
অবশ্যই খেলাধুলা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। এমনকি বাচ্চা বিদ্যালয়ে
দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। বাচ্চারা অনেক দৌড়াদৌড়ি করার কারণে এমনিতে তাদের
পানির পরিমাণ একটু বেশি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন:
পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
তাই প্রত্যেকবার পানি এবং পানি জাতীয় তরল খাবার বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে
খাওয়াতে হবে। বাচ্চার অনেক সময় বিভিন্ন ড্রিংকস জাতীয় খাবার জন্য জেদ করে। এ
সকল খাবার খাওয়া থেকে বিরত রেখে শিশুকে খাবার
স্যালাইন অথবা
কলের বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানি পান করানোই উত্তম। জ্বর হলে শিশুকে কোনক্রমে খালি
গায়ে রাখা যাবে না অবশ্যই কাপড় পরিধান অবস্থায় রাখতে হবে।
যদি সাধারণ সংক্রামিত জ্বর হয়ে থাকে তাহলেই কয়েকদিন বিশ্রামে রাখলে জ্বর সেরে
যাবে। আর যদি কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও জ্বর না সারে তাহলে এন্টিবায়োটিক
জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী অবশ্যই ফুল ডোজ ওষুধ খেতে হবে। নয়তোবা আবার পুনরায় জ্বর আসার সম্ভাবনা
থাকে।
জ্বর হলে গোসল করা যাবে কি না
আমরা অনেকেই মনে করি যখন কোন ব্যক্তি জ্বর হয় তখন তার গোসল করা বারণ। গোসল করলে
ঠান্ডা লাগতে পারে তাতে জ্বর আরো দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে যখন কোন
ব্যক্তির দরবার ঠান্ডা লাগে তখন কপালে জলপট্টি ব্যবহার করা হয়ে থাকে আবার কোন
কোন সময় মাথায় পানি দেওয়া হয়ে থাকে এই পদ্ধতিটা গ্রামাঞ্চলে বেশ প্রচলিত।
আরো পড়ুন:
পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম
তবে বৈজ্ঞানিক মতে জর হলে ওই ব্যক্তি গোসল করতে পারবে। সাধারণভাবে এমনিতেই গোসল
না করলে শরীরে এক ধরনের অস্বস্তি অনুভব হয়ে থাকে। অনেক সময় শরীর ঝিমাতে থাকে
এরপর আবার জ্বর হওয়ার কারণে এই অস্বস্তি আরো বেড়ে যায়। যখন শরীরে একটু জ্বর
অনুভব হয় এবং জ্বর ছেড়ে দেওয়ার সময় যে ঘাম ধরে তা বেশ অস্বস্তি জনক।
গোসল করলে জ্বর বাড়ে না বরং জ্বরের রোগী কিছুক্ষণের জন্য একটু স্বস্তিও পাই,
স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে। যদি জ্বর বেশি মাত্রায় হয় তাহলে জ্বরের রোগীকে অনেক
ঠান্ডা লাগে। এর ফলে পানির সংস্পর্শে আসলে তার শরীর কাঁপাকাঁপি হতে পারে। সেজন্য
ঠান্ডা পানির সঙ্গে একটু গরম পানি মিশিয়ে মোটকথা জ্বরের রোগী যতটুকু সহ্য করতে
পারে সেটুকু তাপমাত্রায় পানি গরম করে রোগীকে গোসল করাতে হবে।
আরো পড়ুন:
দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণ
তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যখন কোন ব্যক্তির জ্বর হয় স্বাভাবিকভাবেই তার
শরীর অনেকটা দুর্বল হয় । তাই হঠাৎ করে রোগী যেন কোন অবস্থাতেই তাড়াহুড়ো করে
গোসল করতে না যায় বা গোসলখানায় না যায়। শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে
মাথা ঘুরে পড়ে
গেলে দুর্ঘটনা হাঁটার সম্ভাবনা থাকে। জ্বর হলে রোগীকে পানি জাতীয় খাবার খাওয়াই
ভালো।
ডাবের জল যে কোন ফলের রস, গরম দুধ খাওয়া জ্বরের রোগীর জন্য খুবই উপকার।
প্যারাসিটামল ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ড্রপস ব্যবহার করা হয়। আবার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাপোজিটর অর্থাৎ মলত্যাগের রাস্তায় যেটি ব্যবহার করা হয়ে
থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক স্বরূপ ইনজেকশন ব্যবহার করত দেখা
যায়।
বাচ্চাদের জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত
জ্বরের রোগীদের জন্য তথা বাচ্চাদের জ্বর হলে যে ধরনের ওষুধ বেশি কার্যকর তা হল
প্যারাসিটামল। প্যারাসিটামল ব্যাথা নাশক হিসেবে বহুল প্রচলিত একটি ঔষধ। এই ওষুধটি
যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা কমাতে, পেটের ব্যথা কমাতে, কর্ণের ব্যথা কমাতে এমনকি
বাচ্চাদের সর্দি ও কাশির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও জ্বরের
জন্য প্রায়শই প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুন:
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
বাচ্চাদের জ্বর হলে প্যারাসিটামল সিরাপ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ট্যাবলেটও ব্যবহার
করতে দেখা যায়। এই প্যারাসিটামল ওষুধটি বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে
ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১ বছরের শিশুর জ্বর হলে করণীয়
সাধারণত কিছু কিছু ভাইরাস জনিত সংক্রমণের ফলে শিশুরা জ্বরে ভোগে। জ্বর এমন একটি
রোগ যা হলে শরীরের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ঘন ঘন জ্বর শিশুর
জন্য খুব ভালো খবর বয়ে নিয়ে আসে না। তাই শিশুর ঘন ঘন জ্বর হলে যা করবেন তা হলো:
- শিশুকে অবশ্যই খোলা ঘরে রাখবেন এবং এক পরিধানের কাপড় পরানোর জন্য চেষ্টা করবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বর বেশি হলে শরীরে মালিশ করতে পারেন।
- শিশুর জ্বর হলে অবশ্যই পানি এবং যেকোনো ধরনের তরল খাদ্যদ্রব্য খাওয়াতে পারেন।
- জ্বরের মাত্রা খুব বেশি হলে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দিতে পারেন তবে কুসুম কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো।
- গরম পানি সেক পর পর বুক, মাথা, ঘাড়ের নিচে পিঠ ও কপালে নিয়মিত হারে দিতে পারেন।
৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে করণীয়
এক বছরের বাচ্চার জন্য জ্বর হলে যা করতে হবে আট মাসে শিশুর জন্য জ্বর হলে একই
পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু আলাদা পদ্ধতি অবলম্বন
করতে পারেন যেমন:
- শিশুকে অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে যেভাবে গোসল করানো হয় সেভাবে গোসল করোনা থেকে বিরত রাখতে হবে।
- খুব বেশি প্রয়োজন না হলে গোসল না করানোর ভালো আর যদি করান তাহলে অবশ্যই পানি গরম করিয়ে গোসল করাতে হবে।
- শিশুকে বিশ্রাম রাখতে হবে সম্পূর্ণরূপে।
- জ্বরের মাত্রা অতিরিক্ত হলে অবশ্যই প্যারাসিটামল নামক সিরাপটি খাওয়াতে হবে।
- প্রতি ছয় ঘন্টা পর পর প্যারাসিটামল সিরাপ সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়াতে হবে।
- ভুলক্রমেও প্রয়োজন না হলে প্যারাসিটামল বা এন্টিবায়োটিক জাতীয় বা অন্য যেকোনো নন-টেরিওডাল, এন এস এ আই ডি জাতীয় ব্যাথার ওষুধ খাওয়াবেন না।
৩ বছরের বাচ্চার জ্বর হলে করণীয়
কিছু কিছু অভিভাবক আছে যারা শিশুকে একটু জ্বর হলেই অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে
যান। বুঝতেই পারেন না কোথায় নিয়ে যাব কি করব। কিছু কিছু্ ঋতু পরিবর্তিত আবার
কারণে ঠান্ডা লাগা সর্দি এবং জ্বর স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। তিন বছরের বাচ্চার
জ্বর হলে করণীয় কি বা যে কাজগুলো করবেন না সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
- অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পানি শিশুকে অবশ্যই খাওয়ানো যাবে না।
- অতিরিক্ত মাত্রায় গরম দুধ এটাও চিকিৎসকের মতে খাওয়ানো শিশুর জন্য বেশ ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়
- আমরা প্রায়শই জ্বর হলে গোসল করা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু সব পরিস্থিতিতেই চিকিৎসকের মতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। তাই প্রয়োজনে হালকা গরম পানি করে শিশুকে গোসল করানো যেতে পারে।
- জ্বর হলে যে ওষুধ খাওয়াতে হবে এমনটি কোন কথা নয়। যদি জলের মাত্রা অত্যাধিক হয়ে থাকে কেবল সেক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে পারেন।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বর ছাড়াও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে তাই ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই।
শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়
জ্বর কামানোর তথা বাচ্চাদের জ্বর কমানোর একটি প্রধান ওষুধ হল শিশুকে বিশ্রাম
দেওয়া। সাধারণত জ্বর অন্যান্য রোগ যেমন টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা
ইত্যাদি রোগের সাথে সম্পৃক্ত মূলত এসব রোগ হলে জ্বরও হয়ে থাকে । তাই এসব রোগ
ভালো হলে জ্বরও আপনা আপনি ছেড়ে যায়।
বাচ্চাদের জ্বর যখন ১০২.২° ফারেনহাইট এর কম হয় এবং বাচ্চা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে
তাহলে জ্বর কমানোর জন্য বেশি চিন্তার প্রয়োজন নেই। খুব বেশি জ্বর হলে আপনি
সাধারণ একটি ওষুধ প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন।
জ্বরের জন্য কোন ঔষধ ভালো
জ্বর হলে যে ওষুধটি সচরাচর ব্যবহার হয়ে থাকে সেটি হল প্যারাসিটামল। প্যারাসিটামল
এর অনেক ভাগ রয়েছে। জ্বরের জন্য এক ধরনের প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়। এটি
সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ব্যথা দূর করার জন্য। যে কোন ধরনের ব্যথা যেমন
মাথাব্যথা, কানে ব্যথা, এমনকি দাঁতে ব্যথার ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ব্যাপকভাবে
ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে জ্বর হওয়ার কারণে শরীরে যে ব্যথার সৃষ্টি হয় সেটি দূর
করার জন্য প্যারাসিটামল খুবই ভালো।
শেষ কথা
শিশুর সামান্য জ্বর হলে অবশ্যই ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা দেওয়া চেষ্টা করুন। কিন্তু
জ্বরের মাথা তীব্র হলে আপনাকে অবশ্যই পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে
ওষুধ খাওয়াতে হবে। মনে রাখবেন যে কোন ওষুধ খাওয়ানো লাগে অবশ্যই পেশাদার
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুদের জলের সমস্যা এবং আরো বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে এবং
রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে এ ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url