অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়ে ছিল
প্রিয় পাঠক, আপনি অবশ্যই
অপারেশন সার্চলাইটের
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়ে ছিল সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।
আপনি হয়তো বা আরো জানতে চাচ্ছেন যে
অপারেশন সার্চলাইটের
পরিকল্পনাকারী কে ছিল? অপারেশন সার্চলাইটের সমস্ত বিষয়ে সম্পর্কে জানতে অবশ্যই
আপনাকে এই আর্টিকেলটি খুব মনোযোগ সহকারে পাঠ করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আরো যে বিষয়গুলো অবগত হতে পারবেন
তা হল অপারেশন সার্চলাইট এর পূর্ব নাম কি ছিল, অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহ রূপ,
অপারেশন সার্চলাইট এর ক্ষতিকর দিক সমূহ, পারেশন সার্চলাইট কেন পরিচালিত হয়
ইত্যাদি বিষয়।
ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাসে
একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হল ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের
গণহত্যা।
তৎকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ জনগণের
ওপর গভীর রাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডমূলক একটি
অপারেশন সার্চলাইট
শুরু পরিচালনা করে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সারাবিশ্বের মানুষকে শোকাহত করে তুলেছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের
জাতীয়তাবাদী
আন্দোলনকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।
অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়ে ছিল
১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানীরা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে ঢাকা সহ আরো বিভিন্ন
অঞ্চলের বাঙ্গালীদের ওপর একটি গণহত্যামূলক অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে। একই
দিনে
স্বাধীনতা যুদ্ধের
নায়ক বাঙালি জনগোষ্ঠীর মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে
পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী। বাঙ্গালীদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্যই পশ্চিমা
শাসকগোষ্ঠী নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়।
১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙালি যখন গভীর ঘুমে মগ্ন ঠিক তখনই পশ্চিমা
শাসকগোষ্ঠী আচমকা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের উপর গুলিবর্ষণ করে। অপারেশন
সার্চলাইট এর ফলে বহু বাঙালি প্রাণ হারায়। তাই ২৫ শে মার্চ রাতকে কালরাত্রি
হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল অপারেশন সার্চলাইট এর খবর সারা
বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ল?
আজকের আর্টিক্যালে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব অপারেশন সার্চলাইটের খবর সারা
বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আসল রহস্য কি। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক অপারেশন
সার্চলাইটের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার গোপন রহস্য।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে
অপারেশন সার্চলাইট এর খবর সারা বিশ্বে প্রচার করার জন্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া
বিশ্বের মানুষকে সচেতন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংবাদ মাধ্যম যেমন জাজিরাত, বিবিসি, দ্যা নিউ ইয়ার্ক টাইমস এই
সংবাদ মাধ্যম গুলোতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদনটি প্রচার করা হয়েছে। যা
বিশ্বের মানুষ বাঙালি জনগণের দুঃখ দুর্দশা কথা দেখে কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারেনি।
সাংবাদিকদের ভূমিকা
অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস্ব হত্যাকাণ্ড লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা
অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। তৎকালীন সময়ে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করা
ঝুঁকির কাজ হলেও এই অপরিসীম ঝুঁকে সম্মুখীন হয়ে স্থানীয় পর্যায়ের এবং
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের রিপোর্টাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের নৃশংস
হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যগুলি ধারণ করে এবং এই বর্বরতার কর্মকাণ্ড সরাসরি বিবৃতি প্রদান
করে।
রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
অপারেশন সার্চলাইটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে
পৌঁছে যায়। সাথে সাথে সারা বিশ্বের সরকার প্রধানরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া
জানাই। এতে করে পশ্চিম পাকিস্তান কঠিন চাপের সম্মুখীন হয়।
জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ
যে সময়ে অপারেশন সার্চলাইট সংগঠিত হয় জাতিসংঘ সেই সময়ে একটা প্রতিবেদন নিয়েছে
এবং এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড অতি বিলম্বে বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের
নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদ এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আলোচনা করার জন্য
এবং একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য প্রয়োজনীয় রেজুলেশন গুলোতে স্বাক্ষর
করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সক্রিয়তা এবং আক্রোশ
অপারেশন সার্চ লাইটের খবর সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সারা বিশ্বে মানুষের
মধ্যে একটি গভীর শোকাহত হয়েছিলেন বিশেষ করে মানবিক মানবাধিকার সংস্থা
সমাজকর্মীরা সাধারণ জনগণ সব শ্রেণীর মানুষের সমস্যার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিক্ষোভ
সংগঠিত করতে এবং প্রত্যেক দেশের নিজ নিজ সরকার প্রধানের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার
জন্য একত্রিত হয়েছিলেন।
প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব
প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বলতে বিশিষ্ট লেখক, বিজ্ঞানী, অভিনেতা, সংগীত বিশেষজ্ঞ এই
শ্রেণীর ব্যক্তিদের নিশংস হত্যা করার জন্য গভীর প্রভাব ফেলে। উক্ত শ্রেণীর এবং
শ্রেণি পেশার অন্যান্য ব্যক্তিদের ওপর। তাদের এই প্রভাবতা সাধারণ জনগণের বিবৃতি
অপারেশন সার্চলাইটের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং আরো অনেক বেশি বিশ্বব্যাপী
জনসাধারণের পূর্ব বাংলার প্রতি সহানুভূতি বাড়াতে সাহায্য করে।
অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনাকারী কে ছিল
১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ এক
অভিযানে অর্ধ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
বাংলার ইতিহাসে
সেই রাতটিকে বর্ণনা করেছেন কাল রাত্রি হিসেবে। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী
১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছিল। এর নিকনেম দেওয়া
হয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট।
তবে এই অপারেশন সার্চ লাইট এর পরিকল্পনা হত্যাকাণ্ডের আরো এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ
১৮ই মার্চ করা হয়েছিল। এ সময় বাংলার রাজনীতি ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। গণপরিষদে
অধিবেশন বন্ধ করায় ঢাকায় এসে সময় বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের তোলপাড় শুরু হয়ে
যায় এবং ঢাকার কিছু কিছু অঞ্চলে বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এর উপর আবার ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক শেখ
মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা জনসাধারণকে আরো বেশি উত্তেজিত করেছিল। এ সময় ঢাকার
রাজপথে ছাত্র-ছাত্রীরা রাইফেল নিয়েও মার্চ পালন করতে দেখতে পাওয়া যায়। এদিকে
শেখ মুজিব এবং ইহাইয়া খানের বৈঠক চলমান ছিল এবং জুলফিকার আলী ভুট্টু ও ঢাকা
শহরেই উপস্থিত ছিলেন। এসব মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনামুখর ছিল।
অপারেশনের সার্চলাইটের পরিকল্পনা
সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের শুদ্ধতম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম
হোসাইন রাজা। অপারেশন সার্চলাইটের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই মেজর জেনারেল
খাদিম হোসেন রাজা। তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন তার নাম
আস্ট্রেঞ্জার ইন মাই ঔন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান (১৯৬৯-১৯৭১) এটি
একটি নীতি পরিকল্পনামূলক গ্রন্থ।
১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চের রাতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল
টিক্কা খান টেলিফোনে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং মেজর জেনারেল নাদিম হোসেন
দাদা কে কমান্ড হাউসে ডেকে পাঠানো হয়। তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের
উপদেষ্টা ছিলেন মেজর জেনারেল রাউ ফরমান আলী।
আরো পড়ুন: ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমন
দুজন উক্ত স্থানে যাওয়ার পর টিক্কা খান বলেন শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের যে আলোচনা সভা চলছিল তা প্রত্যাশিত হারে অগ্রগতি
হচ্ছে না। আর সে কারণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মিলিটারি অ্যাকশনের জন্য
প্রিপারেশন নিতে বলেছেন। ফলশ্রুতিতে ইহাইয়া খান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি
পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
আর এই আদেশ পালন করার জন্যই ১৮ই মার্চ খাদিম হোসেন রাজার বাসায় রাও ফরমান আলী এই
দুইজনে মিলে অপারেশন সার্চলাইটের একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন। ১৮ই মার্চে
খাদিম হোসেন রাজা তার স্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি যেন পূর্ব পাকিস্তানের
জনগণকে বাঙালি এডিসি কে ব্যস্ত রাখেন।
তারা যেন অফিস থেকে তার অফিস থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। যাতে করে রাও
ফরমান আলী নাদিম হোসেন রাজার অফিসে কি করছে এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ না
হয়। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত এই সময় ধরে জেনারেল রাজা ও জেনারেল আলী একটি
সামরিক অভিযান পরিচালনা করার নকশা তৈরি করেন।
খুব কম সময়ের মধ্যে এই দুইজন পরিকল্পনার পরিসর নিয়ে একমত পোষণ করেন। ঢাকার
অন্যান্য অঞ্চলে সামরিক অপারেশনের পরিকল্পনার দায়িত্ব নেন রাও ফরমান আর বাকি
অঞ্চলে সামরিক অভিযানের দায়িত্ব নেন নাদিম হোসেন রাজা। ঢাকার বাহিরে এবং ঢাকার
ভিতরে কিভাবে সামরিক বাহিনীরা কি পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করবে তা
পরিকল্পনা করেন খাদিম।
সন্ধ্যাবেলায় তো খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হন কমান্ড হাউসে। খাদেম হোসাইন
রাজা তার খসড়া পরিকল্পনা সবার সামনে বেশ পেশ করেন এবং কোন ধরনের মতবিরোধ ছাড়াই
পরিকল্পনাটি অনুমোদন করা হয়। ১৯৭১ সালের পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গণসংযোগ
কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সিদ্দিক।
তিনি উইটনেস টু সারেন্ডার এই শিরোনামে একটি বই লিখেছেন যেখানে তিনি অপারেশন
সার্চলাইট নিয়ে কিছু সংলাপ পর্যালোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে জেনারেল
খাদিম এবং ফরমান আলীর একটি নীল কাগজের অফিসিয়াল প্যাডের উপর লিপিবদ্ধ করেন এই
পরিকল্পনার যাবতীয় বিষয়। তিনি আরো বলেছেন এই খসড়া পরিকল্পনার লেখাটি তিনি
স্বচক্ষে দেখেছেন।
এ সার্চলাইটের সামরিক অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ডিফেক্ট
শাসনকে পতন করা এবং পূর্ব পাকিস্তানের আবার পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব পুনর
প্রতিষ্ঠা করা। সিদ্দিক সালক আরো লিখেছেন অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনাটি ১৬ টি
প্যারা সম্মিলিত এবং ০৫ পৃষ্ঠায় লেখা হয় তবে পরিকল্পনাটি অনুমোদন হলেও
অপারেশনটি কবে পরিচালনা করা হবে তার কোন দিন নির্ধারিত করা ছিল না।
অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনার মূল দিকগুলো ছিল নিম্নরূপ যা খাদিম হোসেন রাজা তার
আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ঔন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১ বই এ বর্ণনা করে
গেছেন।
- এতে বলা হয়েছে যে কোন ধরনের বিদ্রোহ বা বিরোধিতাকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
- পরিকল্পনার সফল হওয়ার জন্য আকস্মিকতা ও চতুরতার গুরুত্ব অত্যাধিক সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট কে শত্রুতার আশ্রয় নেওয়ার জন্য সাহায্য মূলক পরামর্শ দিয়েছিলেন।
- যে সকল বাঙালি সেনা সদস্য পুলিশ ছিল তাদেরকে নিরস্ত করা হবে বিশেষ করে পিলখানায় পাকিস্তান রাইফেলসের অস্ত্রাগার রাজারবাগে রিজার্ভ পুলিশ এবং চট্টগ্রামের কুড়ি হাজার মাইলের সম্পূর্ণ রূপে নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।
- অপারেশন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সব ধরনের অভ্যন্তরীর্ণ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন করতে হবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবারো পুনরায় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে।
- বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র এবং অপরাধীদের খোঁজার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো ঘেরাও করতে হবে এবং তল্লাশি চালাতে হবে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতে হবে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের ১৫ জন নেতাকর্মীকে কমিউনিস্ট পার্টির নেতার বাড়িতে তল্লাশি এবং তাদের কাউকে পাওয়া গেলে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে।
- ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে ঘুরে তদন্ত করলেও অপারেশন সার্চলাইটে অংশগ্রহণ করার জন্য সামরিক বাহিনীর কারো কাছে কোন রকমের লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়নি।
- সকাল ১১ টায় জেনারেল টেক্কা খানের কাছে মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইনের একটি ফোন আসে এতে সংক্ষেপে বলা হয়েছিল খাদিম আজ রাতেই সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছিল রাত একটাই আদেশ দিয়ে প্রেসিডেন্ট নিরাপদে করাচিতে পৌঁছে যাবেন আর তারপরে কি ঘটেছিল সেই ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।
অপারেশন সার্চলাইট এর পূর্ব নাম কি ছিল
অপারেশন সার্চলাইট পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী
দ্বারা সংগঠিত একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। যে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই
পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী করে রেখেছিল। এই অপারেশন সার্চলাইটের প্রথম নাম
ছিল ব্লিৎজ। অপারেশন সার্চলাইটের পূর্ব নাম ছিল ব্লিৎজ।
অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহ রূপ বর্ণনা কর
১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী খুব ঠান্ডা মাথায়
নিজস্ব বাঙালির ওপর যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে পৃথিবী ইতিহাসে এটি একটি ভয়াবহ
গণহত্যার মধ্যে অন্যতম। বাঙালি জনগণের বাংলার নাম ও নিশান চিরদিনের জন্য ঘুমন্ত
ঢাকায় পরিচালনা করা হয় অপারেশন নামে এই গণহত্যা পরিচালনা। পঁচিশে মার্চ রাত তখন
অনুমানিক একটা বাজে।
হঠাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের আক্রমণ পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর। আক্রমণ
চালিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার নির্ভর বাঙালিদের হত্যা করা হয়। বাঙালির প্রাণের
নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও আওয়ামী লীগের ১৫
জন নেতা কর্মী এছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টির অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের আটক
করা হয়েছিল। অপারেশনের সার্চলাইটের মুখ্যম উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিয়তাবোধকে
চিরতরে মুছে ফেলা।
অপারেশন সার্চলাইট এর ক্ষতিকর দিক
পঁচিশ মাছ কাল রাতে নিরব বাঙালীদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর
হত্যাযজ্ঞের একটি সাংকেতিক নাম হলো অপারেশন সার্চলাইট। এই অপারেশন সার্চলাইট
পরিচালনা করা হয়েছিল নিরস্ত্র নিরীহ অসহায় বাঙালিদের মন থেকে জাতীয়তা ভাব মুছে
ফেলা। অপারেশন ফাস্ট লাইটের ক্ষতিকারক দিক হল।
- নির্বিচারে নির্দ্বিধায় বিনা অপরাধে ৫০ প্রায় পঞ্চাশ হাজার নিরীহ বাঙ্গালীদের হত্যা করা হয়।
- অপারেশন সার্চ আইটে অনেক লুট পাট হয় এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়।
- নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
- জনগণের মনে ভয়ের আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
- বাঙালি তার প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কেন পরিচালিত হয়
১৯১৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি আসনে জয় লাভ করে। বাঙালিরা মনে
করেছিল এই জয়ের মাধ্যমে তার ক্ষমতায় বসবে। ছয় দফা অনুসারে সরকার গঠন করবে। ২৮
ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাপতি ইয়াহিয়া খান জুলফিকার
আলী ভূট্রকে বিধানসভার কার্যাবলী পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন: মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে
এ সময় এর মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয় তাকে হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন রকম
তদবির চালিয়ে যাচ্ছিল জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি বলেন যে বাঙ্গালীদের ক্ষমতা
থেকে দূরে রাখতে হবে। বিধানসভার এ কার্যক্রম স্থগিত করার প্রতিবাদ স্বরুপ ১৯৭১
সালের ৭ ই মার্চ সালে একটি গণ সমাবেশ ডাক দেয় আওয়ামী লীগ।
এই সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ যোগদান করে। বাঙ্গালীদের মনে স্বাধীন জাতীয়তা বোধ
জাগ্রত করে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মার্চের ভাষণ। এর জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে
পশ্চিম পাকিস্তানি খুব ভয় পেয়ে যায়। বিশেষ করে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা পূর্ব
পাকিস্তানেরকে দুর্বল করার জন্য পরিকল্পনার তৈরি করেন। আর এই পরিকল্পনার
প্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামে হত্যাকাণ্ড পরিচালিত
করা হয়।
এ অপারেশন সার্চ লাইটের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জনগণের মন থেকে জাতীয়তাবোধ
আন্দোলন মুছে ফেলার। যাতে করে পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী আবারো পূর্ব পাকিস্তানের
তাদের শাসন পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
অপারেশন সার্চলাইট এর ফলাফল
অপারেশন সার্চলাইটের ফলে যে হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিল এর ফলস্বরস্বরূপ পরবর্তীতে
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম
পাকিস্তানের মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে করে প্রায় ৩০ লক্ষ
বাঙালি প্রাণ হারায়। অবশেষে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ মিত্র বাহিনীর কাছে
পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করেন। এরই মধ্য দিয়ে
স্বাধীন বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
শেষ কথা
বাঙালির ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট একটি নিশংস গণহত্যা নামে পরিচিত। এই
হত্যাকাণ্ডে প্রাণ দিতে হয়েছিল অসংখ্য নিরহ নিরস্ত্র বাঙালীদেরকে। মূলত পূর্ব
পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এবং বাঙ্গালীদের মন থেকে
স্বাধীন জাতীয়তা বোধ একেবারে মুছে দিতে অপারেশন সার্চলাইট নামে এই হত্যাকাণ্ড টি
পরিচালনা করা হয়। বাঙ্গালীদের ইতিহাস তথা আরো অন্যান্য ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এই
ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url