শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ - শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়

প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাই আমি আপনাদের শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চলেছি। যদি আপনি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং প্রতিকার এবং শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ
প্রিয় পাঠক, আপনি আরো জানতে পারবেন কিভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করতে হয়, ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে কিভাবে খুব দ্রুত এই রোগ থেকে আপনার শিশুকে মুক্ত করতে পারবেন। শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনামূলক এই পোস্টটি করতে থাকুন।

শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগ বর্তমান বাংলাদেশে একটি ভয়ঙ্কর আকৃতি ধারণ করেছে। ডেঙ্গুতে বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। যেহেতু শিশুরা তাদের নিজেদের প্রতি তেমন খেয়াল নিতে পারে না নিজে সতর্ক থাকতে পারে না এজন্য বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একটু বেশি। এরকম সময় শিশুদের প্রতি তার পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের নজর দিতে হবে, এমনটাই জানিয়েছেন বড় বড় বিশেষজ্ঞরা। 

হাসপাতালেই লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু ভর্তি হয়ে আছে। প্রথম অবস্থায় মনে হয়েছিল সাধারণ জর হয়েছে তার কারণ হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের যে লক্ষণ তা তার মধ্যে দেখা যায়নি। পরবর্তী অবস্থায় শিশুটির অভিভাবক লক্ষ্য করে তিন-চার দিন শিশুটির জ্বর কমেনি। তারপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে শিশুটির ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। প্রথমে শিশুর পিতা-মাতা একটু আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পরবর্তীতে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা সুস্থ হয়ে যায় । আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমি আপনাদের শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ উল্লেখ করা হল।
  • শরীরে জ্বরের পরিমান অত্যাধিক পরিমানে বেড়ে যাওয়া।
  • প্রচন্ড পরিমানে মাথা ব্যাথা হওয়া।
  • প্রায় সময় বমি বমি ভাব হওয়া।
  • শরিরের মাংশে পেশিতে ও হাড়ের জয়েন্ট এ ব্যাথা হওয়া।
  • ত্বকের ফুসকুড়ি হওয়া।
  • পেটে প্রচুর পরিমানে ব্যাথা হওয়া।
  • শরিরে অনবরত পানি জমে যাওয়া।
  • শরির অত্যাধিক পরিমানে দুর্বল হওয়া।

শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়

আপনার প্রায় সবাই জানেন যে ডেঙ্গু রোগ মূলত মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বাড়িতে নিয়মিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবহার করুন। এর জন্য আপনারা সর্বপ্রথম যে কাজটি করবেন তা হলো শিশুদের এমন জায়গায় রাখবেন যেখানে মশা কামড়াতে পারবেনা। এছাড়া এক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো হল।
  • ডাক্তারের প্রথম পরামর্শটি হলো এডিস মশার বংশ ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশার জন্ম হয় সাধারণত জমে থাকা পানিতে থেকে। তাই বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল, বালতি, বিভিন্ন ধরনের টব, ডাবের কাটা অংশ, এগুলোতে জমে থাকা পানিতেই এই মশার জন্ম হয়। তাই এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • শিশুদের মশারির মধ্যে রাখতে হবে দিনে এবং রাতে বা যখন ঘুমাবে তখন মশারীর মধ্যে রাখাই উত্তম। আর যে ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর হবে তাকে যে মশা কামড় দিবে এবং ঔ মশা যাকে কামড় দিবে সেই ব্যক্তি ও আক্রান্ত হয়ে যায় তাই সতর্ক থাকতে হবে ।
  • শিশুরা যখন বাহিরে যাবে তখন মশা প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে ।
  • শিশুটি যদি প্রাপ্ত বয়সের না হয় তাহলে স্প্রে ব্যবহার করা যাবেনা।
  • ফুলহাতা গেন্জি বা শার্ট পরার মাধ্যমে মশার হাত থেকে বাঁচতে পারেন ।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত মায়ের দুধ শিশুরা পান করতে পারে এতে কোনো সমস্যা হবেনা ।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরে একদিনেই কেউ আক্রান্ত হয় না। এডিস মশার কামড়ের ফলে শিশুটির শরীরে এক ধরনের ভাইরাস প্রবেশ করে তারপর কয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আবার এমনটা ভাবা যাবে না যে, জ্বর আসছে মানেই যে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। বিষয়টা মোটেও এরকম না। তবে এখন ডেঙ্গুর প্রভাব আগের থেকে বেড়েছে এবং বদলে গেছে তার লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসক ডেঙ্গু জ্বরের কয়েকটি লক্ষণের কথা বলেছেন তার মধ্যে কিছু তুলে ধরা হলো
  • ডেঙ্গু জ্বরের ফলে শরীরে তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে। যেমন ১০১,১০২,১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর মধ্যে আবার অনেক সময় কমও থাকে ।
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শিশুরা অনেক কান্নাকাটি করে ।
  • শিশুরা অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং অযথা কান্নাকাটি করে।
  • খাবার খেতে চায়না , বমি বমি ভাব হয় ।
  • পেট ব্যথো থেকে শুরু করে মাথা ব্যথাও হতে পারে।
  • শিশুর চেহারা দেখতে লালচে মতো হয়ে যায়।
  • আবার অনেক সময় লক্ষ্য করা যায়যে পাতলা পায়খানা হয় যার ফলে পানি শূন্যতা দেখা য়ে।
  • সবচেয়ে মারাত্নক লক্ষন হলো শিশু টানা আট(৮) ঘন্টার মধ্যে কোনো প্রস্রাব না করা ।
  • শিশুর অবস্থা গুরুতর হলে পেট ফুলে যায় শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

শিশুদের ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা কেমন হয়ে থাকে

হাসপাতালে পরীক্ষার পরে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা যেকোনো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । তবে ডেঙ্গু হলেই মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে বিষয়টা এরকম না। অনেক বড় বড় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে, অবস্থা গুরুতর না হলে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। 
যদি অবস্থা ভালো না হয় তাহলে চিকিৎসক নিজেই হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিবেন। ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক যে লক্ষণ গুলো আছে সেগুলো দেখে রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা দিতে পারে| এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অবনতি নাকি উন্নতি হয়েছে তা দেখা হয়। শিশুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেক ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো:
  • শরীরে যদি জ্বর থাকে তাহলে কিছুক্ষন পর পর পানি দিয়ে মুছে দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে।
  • তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন মায়ের দুধ ফলের শরবত, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি।
  • ডেঙ্গু কি ধরনের তার ওপর নির্ভর করে এন্টিবায়োটি বা প্যারাসিটামল অতবা বিভিন্ন ধরনের জ্বরের ঔষধ দিয়ে থাকেন ।
  • স্যালাইন এর মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে নাকি সাধারণ সর্দিজ্বর-কিভাবে বুঝবো?

ডাক্তার মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেছেন শিশুরা সাধারণত এখন দুটি রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে একটি হলো ডেঙ্গু। ঠান্ডা লাগা জাতীয় রোগ সর্দি জ্বর কাশি গলা ব্যথাতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর পূর্বে মূলত শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হয় ফলে শিশুর শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে প্রথম অবস্থায় ঠান্ডা লাগা বা কাশি থাকে না। তবে অনেক বেশি তাপমাত্রার জ্বর হয়ে থাকে জ্বর কমতেই চায় না এবং শরীর ব্যথা করে।
অপরদিকে সাধারণ সর্দি জ্বর হওয়ার পূর্বে হাঁচি কাশি- সর্দি হয়ে থাকে । তারপর আস্তে আস্তে জ্বর আসে। জ্বরের ফলেও হাত পা ব্যথা করে। তবে জ্বর ঠিক হলে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আসে । কিন্তু ডেঙ্গু হলে খুব সহজে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। সাধারণ জ্বর হলে চোখ লাল হয় না। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর হলে লাল হয়ে যায় । সাধারণ জ্বর সর্দি হলে পরিবারের সবার প্রায় এক সঙ্গেই হয় অনেককেই এমনটা মনে করে থাকেন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে ?

ডা. মোঃ মাহবুবুল হক বলেছেন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী যদি হাসপাতালে নিতে দেরি হয় তাহলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে যায়। বর্তমান মৌসুম হলো ডেঙ্গুর মৌসুম । তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলেই পরীক্ষা করে নিতে হবে ডেঙ্গু জ্বর নাকি সাধারণ জ্বর। জ্বর হলে বাসায় বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসক দেখার পরে জানাবেন যে কোন ধরনের রোগ হয়েছে। অনেকে কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই হাসপাতালে ভর্তি হয় এটা করা ঠিক না।
  • ডেঙ্গু রোগের তিনটি ভাগ রয়েছে এগুলো হল এ, বি, সি।
  • এ ক্যাটাগরির রোগীরা খুব একটা বেশি গুরুতর হয় না। তাদের শুধু জ্বর থাকে।
  • বি ক্যাটাগরিতে থাকলে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। বমি বমি ভাব পেটে ব্যথা ইত্যাদি হয়ে থাকে তাই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উত্তম।
  • সি ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর খুবই খারাপ এতে কিডনি লিভার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে অনেক সময় আই সি ইউ দরকার হয়ে পড়ে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত না। বর্তমানে লক্ষ্য করা যায় যে অনেকে কম অসুস্থতা নিয়ে মেডিকেলে বেড নিয়ে আছে। কিন্তু যারা গুরুতর অসুস্থ তারাই বেড পাচ্ছে না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

বাড়িতে কি করবেন?
  • প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • ফলের জুস খাবার স্যালাইন ডাবের পানি এ ধরনের তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে নিয়ম করে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে যদি লিভারের সমস্যা থাকে বা কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে ভুলেও ব্যাথানাশক কোন ধরনের ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবেনা। কেননা ব্যথার ওষুধ খাওয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হতে পারে।যা করবেন না ।
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে কিছুদিন আগে মানুষ প্লাটিলেটকে অনেক প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু বর্তমানে প্লাটিলেটের যেমন খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
  • ল্যাটিলেট কম হয়ে যাওয়ার জন্য যদি শরীরের কোন জায়গা দিয়ে রক্ত পাত হয় তাহলে ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতি তেমন খুব একটা দেখা যায় না।
  • অনেকে ধারণা করেন যে পেঁপে পাতার জুস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে । আসলে পেঁপে পাতার জুস কোনো কাজে আসেনা ।জ্বর কমার পরে এমনিতেই প্লাটিলেট বাড়ে।
  • জ্বর শেষ হলে রক্তপাত কমে যায়।

শেষ কথা

জ্বর হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু জ্বর বলে চিকিৎসা নিবেন না। অবশ্যই চিকিৎসা নেওয়ার পূর্বে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা। কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করার পরই আপনি নিশ্চিত হতে পারেবন। যেমন ধরুন রক্তের পরিক্ষা। ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। ডেঙ্গু জ্বর সহ আরো অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার আর্টিকেল পড়তে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিত করুন আর পেয়ে যান অনেক রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url