শবে কদরের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সম্মানিত পাঠক, আসসালামু আলাইকুম আপনি নিশ্চয়ই জানতে আগ্রহী হয়তোবা আপনি অনেক ইউটিউব ভিডিও ফেসবুক এবং অনেক মৌলভী মাওলানার বক্তব্য শুনেও শবে কদরের ফজিলত ও আমল এবং শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাননি। তাই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমি আপনাদের উক্ত বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং সত্য ধারণা প্রদান করার চেষ্টা করব।
শবে কদরের ফজিলত ও আমল
সম্মানিত পাঠক, উক্ত টাইটেলের বিষয়বস্তু ছাড়াও আপনি আরো জানতে পারবেন শবে কদরের নামাজ কোন কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত, শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। তাই শবে কদরের রাতে ফজিলত এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ শবে কদরের ফজিলত ও আমল

শবে কদরের ফজিলত ও আমল

সম্মানিত মুসলমানগন আসসালামু আলাইকুম, সবাইকে রমজানুল মোবারক। সর্বপ্রথম আমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন করি সেই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। যার অশেষ মেহেরবানীতে অশেষ কৃপায় সুস্থ শরীরে সজ্ঞানে, পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার মাসে, সিয়াম সাধনার পর লাইলাতুল কদর ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানার জন্য এই পোস্টটি করার জন্য তৌফিক প্রদান করেছেন।
তার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে জানাই হাজার হাজার শুকরিয়া। সবাই বলি আলহামদুলিল্লাহ। অতঃপর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী কুলো শিরোমনি, নবীকুলো শিরোভূষণ, আহমদে মোস্তফা, মোহাম্মদে মোস্তফা, আমাদের সবার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি কোটি কোটি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। আবারও সবাই মহব্বতের সঙ্গে বলি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
শবে কদরের ফজিলত ও আমল
এখন আমি আপনাদের মাঝে শবে কদরের রাতের কি ফজিলত এবং আমল সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। তাহলে চলুন জেনে নাও যাক তবে এই কদর রাতে রাত সম্পর্কেঃ

ফরাসি শব্দ হতে শবে কদর শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। সব শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত এবং কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে মর্যাদা, সম্মান, ভাগ্য ইত্যাদি। তাহলে শাব্দিক অর্থে শবে কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে মর্যাদাপূর্ণ রাত। এর আরবি হল লাইলাতুল কদর অর্থাৎ সম্মানিত রাত্রি। এই রাত্রিটি অত্যন্ত সম্মানিত হওয়ার কারণ হচ্ছে লাইলাতুল কদরতে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন লাইলাতুল কদর রাতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল করার মাধ্যমে পবিত্র কোরআন মাজীদ নাযিল করেন। আপনারা অনেকেই জানেন না লাইলাতুল কদর রজনী কি? মহিমান্বিত সম্মানিত, কদরময় লাইলাতুল কদর রজনী হাজারো মাসের রাত অপেক্ষায় অনেক বেশি উত্তম। তাই বাংলা উর্দু হিন্দি সহ নানা ভাষাভাষী মানুষ এই শবে কদর রাতটি উদযাপন করে থাকেন।
পবিত্র রমজান মাস কোরআন নাযিল করা হয়েছিল। সেই অর্থে শবে কদরকে কোরআন নাজিলের রাত গণ্য করা হয়। এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে হেরা পর্বতের গুহায় ফেরেশতাদের সর্দার জিব্রাইল আলাই সাল্লাম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প্রতি পবিত্র কোরআন নামে এই পবিত্র মহাগ্রন্থটি অবতীর্ণ করেন।

সে কারণে পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব বলা হয়। এর আগেও অনেক কিতাব নাযিল হলেও যেহেতু আমাদের আখেরি নবী সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসূলদের সরদার রবিবারের ইমাম সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আহমেদে মোস্তফা মোহাম্মদে মোস্তফা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর প্রতি নাযিল হয়। 

অনেক আলেমগণ মনে করেন যে পবিত্র কোরআন স্পর্শ করা সৌভাগ্যের কাজ। কেউ যদি পবিত্র অবস্থায় নেট মনে পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ করেন তাহলে প্রতিটি হরফে দশটি করে নেকি তার আমলনামায় জমা হয়ে যাবে। (আলহামদুলিল্লাহ)। হযরত মুহাম্মদ (রাঃ) এই কোরআন শরীফের মাধ্যমেই ফেরেশতাদের সরদার হওয়ার সম্মান লাভ করেছেন। আরব দেশ মরুভূমির দেশ। এই মরুভূমির দেশ কোরআন শরীফের স্পর্শেই পবিত্রতা লাভ করেছে।

পবিত্র রমজান মাসের শেষের ১০ রমজানের যেকোনো বিজোড় রাত শবে কদরের রাত হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে কোন রাত্রি শবে কদরের রাত্রি সেরা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তাই এর সমাধানস্বরূপ রমজান মাসে ইতিকাফ এর প্রচলন করেছেন। ইতেকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হল শবে কদর রাত্রি প্রাপ্ত করা। যারা ইতেকাফ করে তারা শেষের ১০ রমজানের প্রতিটি রাতেই আল্লাহতালার গুণগান এবং জিকির আজগারে মগ্ন থাকেন।

এতেকাফ মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সানিধ্য কামনা করা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসরাত করেছেন যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ার সকল মায়া ত্যাগ করে রমজানের শেষের ১০ দিন ঈমানের সঙ্গে নেটক মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যে শবে কদরের রাত্রি যাপন করে আল্লাহর ইবাদত করবে এই ব্যক্তির অতীতের সকল গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন (সুবহানাল্লাহ)।

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত

শবে কদরের রাতের কত রাকাত নামাজ পড়তে হয় তা নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। এ মহমানে তো রাতে নফল নামাজ যত হেদায়েতের সহিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপনি পড়তে পারেন। নামাজ ছাড়াও এই গৌরবময়/মহামান্বিত রাতে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন, বেশি বেশি দোয়া পাঠ করতে পারেন, তওবা করতে পারেন।

শবে কদরের নফল নামাজ আট এর বেশি পড়ার চেষ্টা করবেন। হাদিসে আছে যে শবে কদরের রাতে এবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন লাভের আশায় জিকির আজগার, নফল নামাজ, কবর জিয়ারত, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ধরনের এবাদত করলে একটু রাতে ওই বান্দাটি আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তার মনোবাসনা পূরণ করে দেবেন (সুবহানাল্লাহ)।

শবে কদরের নামাজ কোন কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়

পবিত্র রমজান মাসের একটি বরকতময় মাস। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। পবিত্র রমজান মাসের শেষে ১০ রমজানে বেজোড় যেকোনো একটি রাত্রিকে পবিত্র শবে কদর রাত হিসেবে জানি। তবে অনেকে ২৭ শে রমজানের রাতকেই শবে কদর রাত হিসেবে গণ্য করে রাত্রি যাপন করেন।
 আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। তবে ২৭ শে রমজান ঈদ পবিত্র শবে কদরের রাত্রি এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। রমজান মাসের শেষের ১০ রমজানের যেকোনো একটি বেজোড় যাত্রীকে পবিত্র কদরের রাত হিসেবে গন্য হবে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই রাতে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী হয়ে থাকেন। তাই এই রাতের অত নাম কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে।

 নামাজের নিয়ম কি পদ্ধতিতে নামাজ পড়তে হয় বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদরের নামাজে নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

শবে কদরের নামাজ দুই রাকাত করে যত বেশি পাওয়া যায় ততই বেশি সওয়ার। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন একটি সূরা যেমনঃ সূরা ইখলাস, সূরা কদর, সূরা আয়াতুল কুরসির) এ সকল সূরা সম্মিলিতভাবে একের পর এক মিলিয়ে পড়লে অনেক বেশি পরিমাণে সওয়াব পাওয়া যায়। দুই রাকাত করে আট রাকাত বা আপনার সম্ভব হলে আরো অনেক বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

তবে যারা ওপরে উল্লিখিত সূরা না জেনে থাকেন তাহলে সূরা ফাতিহার সাথে আপনি যে সূরাটি জানেন তার যেখানে একটি সূরা পাঠ করতে পারেন। এছাড়াও নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি তসবিহ গণনা করা, বেশি বেশি দোয়া পাঠ করা, শেষ রাতে আট রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারলে আরো অনেক বেশি সওয়াবের ভাগীদার হবেন।

শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত

অনেকে এরকম প্রশ্ন করে থাকেন শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম? সঠিক উত্তরটি যদি আপনি উপরে আর্টিকেলগুলো মনোযোগে পড়েন তাহলে ইতিমধ্যে অবশ্যই পেয়ে গেছেন। তবে যারা সরাসরি আর্টিকেলের এ পর্যায়ে থেকে পড়া শুরু করেছেন তাদের উদ্দেশে আমি আবারও এই প্রশ্নটির উত্তর প্রদান করছি। পবিত্র মাহে রমজানের শবে কদরের রাত্রির নামাজ অবশ্যই নফল নামাজ। এ নফল নামাজ যত বেশি আদায় করবেন তত বেশি বেশি সওয়াব পাবেন। নফল সালাত সাধারণত নিজের জন্যই আদায় করা হয়ে থাকে।

শবে কদরের নামাজ কখন পড়তে হয়

রমজান মাসের শেষের ১০ টি রোজার যেকোন বেজোড় একটি রাত লাইলাতুল কদর রাত হয়ে যাবে বর্ণনা করা হয়। তবে একে শবে কদর রাতে বলা হয়ে থাকে। এটি একটি মহিমান্বিত রাত। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য লাইলাতুল কদর রাতে আল্লাহর বান্দারা বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী দোয়া কালেমা পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করে। লাইলাতুল কদর রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত এবং নিয়ামত আল্লাহর বান্দাদের উপর বর্ষিত হয়ে থাকে।

এ রাতে বান্দারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করেন, কেউ কেউ কোরআন তেলাওয়াত করেন, কেউ কেউ হাদিসের বই পড়েন, আবার কেউ কবর জিয়ার করে থাকেন এবং অনেকেই নিজের পাপ কাজের জন্য আল্লাহপাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।

লেখকের মন্তব্য

আপনি যদি লাইলাতুল কদর রাতে সওয়াব নিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইতেকাফ করতে হবে। কেননা হাদিসে এরকম এসেছে যে লাইলাতুল কদর রাত নির্দিষ্ট ভাবে কোন রাত এটা নির্দিষ্ট করে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা নেই। হাদিসে এরকম এসেছে যে পবিত্র রমজান মাসের শেষে ১০ টি রমজানের যে কোন একটি বেজোড় অর্থা ২১ রমজান, ২৩ রমজান, ২৫ রমজান, ২৭ রমজান এর যেকোনো একটি রাত শবে কদরের রাত হিসেবে গণ্য হবে।

 তাই আপনি যদি এতেকাফ করেন এবং প্রতিরাতেই আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করেন তাহলে একটি রাত আপনি পেয়ে যাবেন যে রাত্রি পবিত্র শবে কদরের রাত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url