গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ | গর্ভকাল হিসাব করার সঠিক নিয়ম
সম্মানিত পাঠক, গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ কি কি এবং গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। যদি আপনি একজন সম্ভাব্য গর্ভবতী মহিলা অথবা সম্ভাব্য গর্ভবতী মহিলার স্বামী অথবা হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সম্পর্কে জানতে হবে। আর তাই গর্ভবতী মহিলার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কি কি বিস্তারিত জেনে নিন।
প্রিয় পাঠক, আপনি আরো জানতে পারেন, গর্ভবতী মহিলাদের খাবার কি কি, গর্ভবতী মহিলাদের চার মাসের বাচ্চা নড়াচড়া কেমন হয় এবং ছয় মাসে বাচ্চা নড়াচড়া কি রকম হয়, গর্ভবতী হওয়ার পর কত মাস পর্যন্ত স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারবেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ সর্ম্পকে।
পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ
একজন নারী গর্ভধারণের সময় যে বিষয়টি লক্ষ্য করেন সেটি হল তার মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার। তবে মাসিক বন্ধ হলে যে সে মেয়েটির গর্ভবতী এটা ভুল ধারণা। অনেক সময় বিভিন্ন অসুস্থতার কারণেও মেয়েদের মাসিক বন্ধ এবং ও অনিয়মিত হারে মাসিক হতে পারে। যদি আপনার মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এবং আপনি গর্ভবতী কিনা সেটা যদি নিশ্চিত হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি
প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করার জন্য কাটি ব্যবহার করে ঘরে বসে প্রস্রাবের নমুনা দ্বারা খুব সহজেই আপনার গর্ভবতী অবস্থাটা জেনে নিতে পারবেন। বেশিরভাগ ফার্মেসির দোকানগুলোতে এই প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা কিট বা কাটি পাওয়া যায়। তবে এই কাটি দিয়ে পরীক্ষা করার পরও অনেক সময় নেগেটিভ রেজাল্ট আসতে পারে।
সে কারণে আপনি যদি প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য কাটি বা কিট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই একাধিক বার পরীক্ষা করতে হবে। কমপক্ষে তিনবার পরীক্ষা করার পর যদি ফলাফল একই রকম হয় তবে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি আপনি প্রেগন্যান্ট কিনা। তবে আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করা মাধ্যমে ও প্রেগনেন্সি অপেক্ষা করতে পারবেন।
গর্ভকাল হিসাব করার সঠিক নিয়ম
আপনি কবে থেকে গর্ভবতী এবং আপনার গর্ভে সন্তানকে কত মাসের সে সম্পর্কে জানতে পারবেন যদি আপনি গর্ভকাল হিসাব সঠিক করে থাকেন। অনেকে এই হিসাব করতে গিয়ে ভুল করে বসে। আমি আপনাদের একটু স্পষ্ট ভাবে গর্ভকাল হিসাব করার একটি সঠিক এবং সহজ নিয়ম সম্পর্কে ধারণা প্রদান করব।
ধরুন যে, আপনার কোন একটি মাসের 5 তারিখে মাসিক শুরু হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মে দশ তারিখে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী মাসিকের সময়কাল হল পরবর্তী মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। যদি উক্ত তারিখের মধ্যে আপনার মাসিক না হয় তাহলে আপনি প্রেগনেন্সির পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যদি রেজাল্ট পজেটিভ আসে তাহলে আপনার গর্ভধারণের সময় আগের মাসের ৫ তারিখ থেকে গণনা করা হবে। অর্থাৎ আপনার মাসিকের প্রথম দিন হচ্ছে আপনার গর্ভকাল সময়ের প্রথম দিন।
একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম সপ্তাহে যে সকল শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে
- স্তনের গোড়ায় অর্থাৎ স্তনের বোটায় খোঁচা খোঁচা আঘাত লাগতে পারে থেকে একটু অস্বস্তিবোধক লাগতে পারে। কখনো কখনো স্তন ফুলে যেত পারে।
- মহিলাদের মূত্রনালীর অংশটি গাড়ো কালচে কিংবা আকাশী গোলাপী রং ধারণ করতে পারে।
- মহিলাদের মূত্রনালী থেকে হালকা রক্তপাত হতে পারে।
- যেগুলো মহিলার সাদাস্রাব রয়েছে তাদের সাদা স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে।
- খাদ্য অভ্যাসে ও কিছু পরিবর্তন লক্ষ্যনীয় যেমন ধরুন হঠাৎই কোন খাবারের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। আবার কখনো কখনো প্রিয় খাবারগুলো খেতে ভালো না লাগা।
- শরীরে অনেক ক্লান্তিবোধ হতে পারে।
- গর্ভকালীন শুরুতে বমি বমি ভাব হতে পারে।
- মন মেজাজ অনেক পরিবর্তন হতে পারে।
- স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে প্রস্রাব হতে পারে।
- কখনো কখনো ওজন কম অথবা বেশি হয়ে থাকে।
- প্রায় সময়ে মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যায়।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে গিয়ে বুক জ্বালা করতে পারে।
- হাঁটার সময় পায়ে খিল ধরতে পারে।
- পিঠের নিচের অংশগুলোতে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- কখনো কখনো কষ্ট কাঠিন্য হতে পারে।
- এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের আরেক কিছু লক্ষণ হলো. ঋতুচক্রের সময়ে পাঁচ থেকে দশ দিন হালকা রক্তপাত হতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ের প্রথম সপ্তাহে মুখের স্বাদ একটু ভিন্ন রকমের হতে পারে কখনো কখনো মুখ থেকে প্রচুর পরিমাণ দুর্গন্ধ হোক বের হতে পারে। গর্ভধারণের সময় হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন হওয়ার কারণে এ ধরনের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
- যখন একজন মহিলা প্রথম গর্ভবতী হন তখন অতিরিক্ত পরিমাণে স্বপ্ন দেখে থাকেন। বিশেষ করে বাচ্চাকাচ্চা নিয়েই স্বপ্ন দেখে থাকেন ওইসব মহিলারা।
গর্ভবতীর লক্ষণ দেখা দিলে গর্ভবতী মহিলাদের যে বিষয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে অর্থাৎ কিভাবে যত্ন নিতে হয়
- গর্ব অবস্থায় প্রথমদিকে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বিশেষ করে অস্বস্তি বোধ বমি বমি ভাব বেশি হলে আপনার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শরীরে কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা করে ওষুধ খেতে পারেন।
- যদি হাঁটার সময় পায়ে খিল ধরে তাহলে ম্যাগনেসিয়াম অথবা ক্যালসিয়াম সেবন করে দেখতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাবেন এবং খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনবেন।
- অবশ্যই আপনার পুরো গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়ম মেনে কিছু ইমোশীলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি অস্বস্তি বোধ করছেন ততক্ষণ আপনার শারীরিক চলাফেরা এবং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। গর্ব অবস্থায় আপনি যত সচল থাকবেন আপনার শারীরিক অবস্থা সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া ততই সহযোগী।
- পরিমাণ মতো পরিষ্কার খাবার গ্রহণ করতে হবে। যাতে সম্ভাব্য সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করা যায় বিশেষ করে মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এ জাতীয় খাবার খেতে হবে যা থেকে প্রচুর পরিমাণে শক্তি ভিটামিন আমিষ এবং খনিজ পদার্থ শরীরে শারীরিক গঠনে ভালো করা যায়।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়
যখন একজন মহিলা পেটে সন্তান আসে বিশেষ করে প্রথম সপ্তাহে তেমন কোন লক্ষণ অনুভব করা যায় না। এতে সন্তানের আসলে প্রথম এক মাসে ওই মহিলা বুঝতে পারবেন না যে তার গর্ভে সন্তান আছে। সে কারণে যে লক্ষণগুলো গর্ভবতী মায়েদের খেয়াল করতে হবে সেটি হলোঃ মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়াও আরো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে যে গর্বের সন্তান এসেছে লক্ষণগুলো হলঃ
- মহিলাদের প্রস্রাবের ধারে অর্থাৎ যোনিপথে হালকা রক্ত বের হওয়া
- কখনো কখনো মাথা ঘুরানো
- স্তনে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা অনুভব করা
- তখন ফুলে ওঠা
- স্তনের বোটায় খোঁচা মারার মত অস্বস্তিকর ব্যথা অনুভব করা
- প্রায় প্রায় বমি বমি ভাব হওয়া
- শরীর অত্যাধিক ক্লান্ত অনুভব করা
- পেট ফাঁপা কেটে অস্বস্তি কখনো কখনো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়া
- সাদাস্রাব থাকলে তার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- মাসিক হওয়ার সময় যে ধরনের ব্যাথা হয় ঠিক একই রকম ব্যাথা হওয়া
- প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হওয়া
- ঘ্রান শক্তি প্রবল আকার ধারণ করা
- মুখে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হওয়া
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলেই আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না যে আপনি গর্ভবতী। কেননা এসব লক্ষণগুলো কারো কারো ক্ষেত্রে মাসিক হওয়ার অনেক আগেই লক্ষ্য করা যায়। যেমন ধরুনঃ স্তনে ব্যথা বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা যাওয়া ইত্যাদি। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরও সেরকম কোন লক্ষণই বোঝা যায় না। যার জন্য গর্ব ধরণের বিষয়টা ধারণা করতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
আপনি যদি গর্ব অবস্থায় নিশ্চিত হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে। বিভিন্ন ফার্মেসি হতে কিট বা কাঠির সাহায্যে প্রস্রাব এর মাধ্যমে ঘরে বসেই খুব সহজেই আপনি নিজেই প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে পারবেন। তবে আরো নিশ্চিত ভাবে পরীক্ষা করার জন্য নিকটস্থ ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র অথবা কোন গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে আপনার গর্ব অবস্থায় চেক করে নিশ্চিত হতে পারেন।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
একজন গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য এবং পুষ্টিকর খাবার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা একজন গর্ভবতী মহিলাদের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা মিশ্রিত করে গর্ভবতী মহিলার গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য এবং শারীরিক গঠন নিশ্চিত করতে গর্ভের সন্তানের শারীরিক গঠন মজবুত এবং শিশুর বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য রোগ প্রতিরোধমূলক একটি পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
খাবার তালিকা যে রকম হওয়া দরকার
একজন গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় একই রকমের খাবার বেশি পরিমাণে রাখা ঠিক নয়। প্রতিদিন আলাদা আলাদা ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। মহিলাদের পেটের ব্যাথা আসলে এটি নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অনেক বেশি পরিমাণে রুচি আসতে পারে।
এ সময় আপনি এই খাবারগুলো একসাথে অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকের ক্ষেত্রে গর্ব অবস্থায় আসতে পারে আবার কখনো কখনো বমি বমি ভাব হওয়ার কারণে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। এ সময় কিছুই খেতে মন চায় না এ ক্ষেত্রে খাবারের সময় অনেক বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে খাবার খান প্রয়োজনে ছয় থেকে সাত বার খেতে পারেন।
গর্ভকালীন সময়ে শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীরের সবটুকু পুষ্টি চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে। গর্বের সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
কোন মাসে কোন খাবার খাবেন
পেটে বাচ্চা আসলেই যে অনেক বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হবে বিষয়টি ভুল। গর্ভকালীন সময়ে প্রথম তিন মাস সাধারণত স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে তবে তার মাস থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় খাবারে একটু পরিবর্তন আনতে হবে। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। যাতে করে শরীরের ওজন বৃদ্ধি, নিশ্চিত করা যায়।
খাবারের ক্যালোরির পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে। যে গর্ব অবস্থায় কতটুকু খাবার খেলে ক্যালরির পরিমাণ বা ক্যালোরি চাহিদা পূরণ হয় খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্য রকমের খাবার খেলে পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
প্রথম এক থেকে তিন মাসের গর্ভবতী মহিলার খাবার তালিকা
সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে এক থেকে তিন মাসের মধ্যে খাবারে তেমন পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই। এ সময় খাবারের তালিকা গর্ভবতী মহিলার উচ্চতা ওজন এবং দৈহিক পরিশ্রম অনুযায়ী পরিমাণ মতো বেশ কিছু খাবার গ্রহণ করলেই হবে। যেমন ধরুনঃ গর্ভবতী মহিলার ওজন বাড়তে থাকলে খাবার খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
আর যদি ওজন অতিরিক্ত পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে খাবার একটু কমিয়ে এবং দৈহিক পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়ে অথবা ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। আবার ওজন যদি কমতে থাকে তাহলে শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে খাবারের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়।
তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনি পেশাদার ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে পারেন। তিনি আপনার খাবারের তালিকা তৈরি করার জন্য সাহায্য করবেন। একজন ০৫ ফুট উচ্চতার গর্ভবতী মহিলার ওজন ৫৫ কেজি এবং সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যায়াম করেন। এরকম একটি গর্ভবতী মহিলার এটি খাবারের তালিকা উল্লেখ করা হলোঃ
ভাতঃ প্রতিদিন তিন বেলায় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম চালের ভাত খেতে হবে। তবে চাল যদি লাল চাল হয়ে থাকে সেক্ষেত্র আরো ভালো হয়।
শাকসবজিঃ সব শাকসবজি এবং রঙিন শাকসবজি দুটো মিলিয়ে 300 থেকে 400 গ্রাম সবজি খেতে হবে।
ফলমূলঃ ফলমূল একটু বেশি খেলে সমস্যা নেই তবে দিনে আড়াইশো গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলমূল খেলে খুবই ভালো হয়। হরমোনের সাথে হলুদ এবং কাঁচা সবজি ও খেতে পারে না।
ডিমঃ আমরা জানি যে ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার। তাই বলে অতিরিক্ত পরিমাণে ডিম খাওয়া গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের পক্ষে এমন সুফল বয়ে নিয়ে আসে না। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খাবেন।
দুধঃ ডিমের মতো দুটো একটু পুষ্টিকর এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার। অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খেলে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন আড়াইশো গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম অর্থাৎ এক গ্লাস দুধ পান করবেন।
মাছ এবং মাংসঃ মাছ এবং মাংস স্বাভাবিক খাবারের মতোই অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমাণ খেয়ে থাকেন সেই পরিমাণে খাবেন। প্রতিদিন এক টুকরা মাছ যার পরিমান 50 থেকে 60 গ্রাম হলেই ভালো হয়।
ডালঃ প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ডায়াল রান্না করে খেতে পারেন।
উপরোক্ত খাদ্যগুলো রান্না করে খাওয়ার সময় অবশ্যই তেলের পরিমাণ কম রাখবেন। অতিরিক্ত পরিমাণ তেল দিয়ে রান্না করা খাবারে পুষ্টি গুণ সেরকম বাড়ে না এবং খাবারে পরিমাণ ও অনেক ক্যালোরির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সে কারণে রান্না করার সময় তেল একটু কম ব্যবহার করা চেষ্টা করবেন।
চার থেকে নয় মাসে গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকা
চার মাসের পর থেকে গর্ভের সন্তান একটু একটু করে বেড়ে উঠতে শুরু করে। এ সময় গর্ভবতী মহিলার খাদ্যের চাহিদা ও আস্তে আস্তে একটু বেড়ে যায়। তাই প্রথম এক থেকে তিন মাসের খাদ্য তালিকা চেয়ে চার মাস পরে খাওয়া দাওয়া পরিমাণ একটু পরিবর্তন আনতে হবে অর্থাৎ খাবার পরিমাণ বাড়াতে হবে। একজন স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতী মহিলার তার থেকে ৬ মাস হলে প্রতিদিন প্রথম তিন মাসের খাদ্যের চেয়ে ৩৫০ ক্যালোরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ
আবার যখন গর্ভবতী মহিলার ৭ থেকে ৯ মাসের মধ্যে অবস্থান করবেন তখন অন্যান্য সময়ে খাদ্যের চেয়ে প্রায় ৫০০ ক্যালোরি খাবার খেতে হবে। তবে আপনার ওজন যদি একটু বেশি হয়ে থাকে তাহলে একটু কম পরিমাণে খাবার খেতে পারেন। তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
গর্ভাবস্থায় দুটি খাবার নিয়মিত খাবেন সেটি হচ্ছে ডিম ও দুধ। তবে ডিম খাওয়ার সময় অবশ্যই সেটি পুরোপুরি সিদ্ধ অবস্থায় খাবেন আর দুধ খাওয়ার সময় ভালো হবে গরম করে খাওয়ার উপযুক্ত করে খাবেন। আশা করছি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সর্ম্পকে বুজতে পরেছেন।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খাওয়া যাবে না
গর্ভ অবস্থায় মহিলাদের খাদ্যের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায় সে কারণে অনেকেই হাতের কাছে যা পায় সেটাই খেয়ে নেয়। কিন্তু আপনাকে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হলে যে আপনি শুধু একা নন আপনার সাথে আরও একজন রয়েছে। আপনি যা খাচ্ছেন তার পুষ্টি গুনাগুন তার ভিতরে অবতীর্ণ হচ্ছে। সে কারণে খাবারের একটু নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার পরিমাণ অনুসারে খেতে হবে।
আর যে সকল খাবার থেকে বিরত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন সেগুলো হলোঃ
চিনিযুক্ত খাবারঃ অবশ্যই চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এই খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
তেল চর্বিযুক্ত খাবারঃ যেমন ভাজাপোড়া, পরোটা, তেড়ে ভাজা কেক এগুলো খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। কেননা এ খাবারগুলো পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে না। অন্যদিকে শরীরে ফ্যাট অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি করে থাকে। যা গর্ভবতী মহিলার জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়াও আর কিছু খাবার গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খাওয়া যাবে না এবং গর্ভে সন্তানের জন্য নানান জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে যেমন ধরুনঃ
- মাখন এবং মাখন জাতীয় খাবার
- ক্রিম জাতীয় খাবার
- ঘি জাতীয় খাবার যেমন ডালডা
- বিভিন্ন চকলেট জাতীয় খাবার
- বাইরের ভাজাপোড়া খাবার
- দোকানের বিভিন্ন চিপস জাতীয় খাবার
- ও পুষ্টিকর বিস্কুট জাতীয় খাবার
- বিভিন্ন কেক জাতীয় খাবার
- পেস্ট্রি জাতীয় খাবার
- বিভিন্ন কোম্পানির আইসক্রিম
- পুডিং
- কমল পানীয় খাবার যেমন কোকোকোলা সেভেন আপ ইত্যাদি।
এ খাবারগুলোতে সেরকম কোন ক্যালোরি থাকেনা এগুলো খাবার খেলে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ওজন বাড়িয়ে এবং কমিয়ে দিতে পারে। আবার শরীরে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যা আপনার গর্ভের শিশুর জন্য এবং আপনার জন্য মারাত্মক ক্ষতির সৃষ্টি হতে পারে।
তবে এগুলো খাবার খাওয়া যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আগ্রহ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে আপনি অতটুকুই খাবেন যতটুকু খেলে আপনার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তবে এ খাবারে পরিবর্তে আপনি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিতে পারেন। যেমন ধরুনঃ রুটি, লাল কালের ভাত, আর স্বাস্থ্যকর তেল যেমনঃ অলিভ অয়েল বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও ইলিশ ইত্যাদি জাতীয় খাবার।
৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
তিন মাস পেরিয়ে গর্ভকালীন সময় যদি চার মাসের অবতীর্ণ হয় তখন গর্ভবতী মহিলারা তার শিশুর নড়াচড়া বুঝতে পারেন। যারা ইতিমধ্যে প্রথম সন্তানের মা হয়ে গেছেন তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত এবং যারা প্রথমবার মা হচ্ছেন তারা কেউ কেউ গর্ভের সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ ১৬ সপ্তাহ পার হলে শিশুর নড়াচড়া একটু একটু করে বুঝতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ আমি মোটা হবো কিভাবে
তবে ১৮ সপ্তাহ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর নড়াচড়া ভালোভাবে বুঝতে পারেন। এ সময়ে গর্ভবতী মহিলার সাথে তার সন্তানেরও নড়াচড়া বেশি হতে পারে এবং ওজনও তুলনামূল ক বাড়তে পারে। যেসব মহিলারা প্রথমবার সন্তানের মা হতে চলেছেন সেসব মহিলারা কোন কোন সময় সন্তানের নড়াচড়া বুঝতে ২০ সপ্তাহ লাগতে পারে।
৬ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
অনেক মহিলারা গর্ভে সন্তান নড়াচড়া কম করলে একটু টেনসন করেন। কিন্তু প্রতিদিনই যে আপনার সন্তান নড়াচড়া করবে এমনটা নাও হতে পারে। কেননা প্রতিটি শিশুর নড়াচড়া একটু আলাদা আলাদা রকম হতে পারে। তবে ছয় মাসের পরে শিশুর নড়াচড়া একটু স্বাভাবিক থাকবে। মাঝেমধ্যে পেটের মধ্যে একটু নড়াচড়া অনুভব করবেন।
তবে ছয় মাস পরে ত্রৈমাসিক মাসের সময়ে শিশু প্রতিদিন এবং স্বাভাবিক অনুভব করা উচিত। সাধারণত ২৮ অধ্যায় আশেপাশে সন্তানের নেওয়ার স্বাভাবিক থাকবে এবং গর্ভধারণের আগ পর্যন্ত এই নড়াচড়া স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে।
গর্ভবতী অবস্থায় কত মাস পর্যন্ত সহবাস করা যায়
সন্তান পেটে আসার পর স্বামীর সঙ্গে সহবাস করা যাবে না অনেকে এরকম মনে করেন। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। তবে গর্ব অবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট সময়ে সতর্কতা মেনে সহবাস করলে তেমন কোন সমস্যা হবে না। বিশেষ করে প্রথম তিন মাস সহবাসের জন্য এমন কোন বিধি-নিষেধ নেই এবং শেষের দুই মাস মাসেও বিধি নিষেধ নেই।
তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সহবাস করার সময় অবশ্যই গর্ভে সন্তানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে করে গর্ভে সন্তান কোনক্রমে আঘাত না পাই। সহবাস করার সময় গর্ভবতী মহিলাদের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। তাছাড়া গর্ব অবস্থায় মহিলারা স্বাভাবিক কাজ এবং একটু শরীর চর্চা করতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
আপনি যদি একজন গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে সব ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খাবারের দিকে পুষ্টি গুনাগুনের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ কোনো কাজকাম অর্থাৎ ভারী কাজ না করাই ভালো। পুষ্টি গুনসম্পন্ন খাবার নিয়মিত খাবেন এবং পরিমাণমতো ঘুমাবেন। যদি বিশেষ কোনো সমস্যা মনে হয় অবশ্যই গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url